বাংলাদেশি পর্যটক সংকটে অঘোষিত হরতালের ছাঁয়া, ধুঁকছে সীমান্তপারের ব্যবসায়ীরা

|

সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছলেই শুনশান দৃশ্য দেখতে পেতে পারেন। হঠাৎ করে আবার ভারতে লকডাউন শুরু হয়ছে নাকি সেই প্রশ্নে আপনি আতঙ্কিতও হতে পারেন। কারণ পরিস্থিতি এমনই। চারিদিকে খাঁ খাঁ করছে জন মানবহীন এলাকা! কেউ আবার বলছেন পরিস্থিতি নাকি ধূধূ মরুভূমির মতো। কেউ আবার বলছেন কোভিড কালেও এই চিত্র দেখা যায়নি।

তবে যে যাই বলুক না কেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলের চেহারা যে মোটেই ভালো না তা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন। পরিসংখ্যান বলে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল-বেনাপোল আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে, ঈদ কিংবা অন্য উৎসবের মৌসুমগুলিতে সেই পর্যটক সংখ্যা অনেকটাই বাড়ে। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে ভারত তথা কলকাতা হয়ে উঠে প্রিয় ভ্রমণস্থল। সেইসব পর্যটকদের অধিকাংশই আবার যায় পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। আর সেই পর্যটকদের উপরই নির্ভরশীল পেট্রাপোল বন্দরের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের রুটি-রোজগার।

পরিবহন, খুচরা ব্যবসায়ী, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, ফলওয়ালা, কসমেটিক্স বিক্রেতা, ভাতের হোটেল, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা- তাদের সকলেরই উপার্জন নির্ভর করে বাংলাদেশি পর্যটকদের আগমনের উপর।

কিন্তু সেই উপার্জনে আজ বড় ধাক্কা! বিশেষ করে গত বছরের ঈদেও যেখানে পেট্রাপোল স্থলবন্দর এলাকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবসায়ে যুক্ত মানুষজন দম ফেলার ফুরসৎ পাননি। আর এবার কার্যত মাছি মারতে হচ্ছে তাদের।

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) পেট্রাপোল স্থলবন্দর ঘুরে দেখা গেছে এক হতাশা ও অলসতার ছবি- ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই লক্ষী লাভের আশায় দিন গুনছেন।

দেশ ট্রাভেলস এর কলকাতা চ্যাপ্টারের মালিক মুহাম্মদ আলি হোসেন শেখ জানান, প্রতিবার ঈদে আমরা যে ব্যবসা করে থাকি, সেই তুলনায় এবারের ঈদে ব্যবসা অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এর পিছনে রয়েছে ভিসা ব্যবস্থা। ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ৬০ শতাংশ টুরিস্ট ভিসা, ৩০ শতাংশ মেডিকেল ভিসা ভিসা দিতো। কিন্তু এবারে ভিসা ইস্যু হয়নি বলে কোনো রকম ব্যবসা পাইনি।

এই ব্যবসায়ী বলেন, পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক ছিল তখন প্রতিদিন দেশ ট্রাভেলস’এর ৮টি বাস চলাচল করতো কলকাতার নিউমার্কেট থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত। আর এখন পর্যটকের অভাবে ওই একই যাত্রাপথে মাত্র ১টি বাস চলাচল করে তাও আবার মাসে ১৫ দিন।

তার দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে পেট্রাপোল চেকপোস্ট কিংবা কলকাতার নিউমার্কেটে মাত্র ২ শতাংশ ব্যবসা চলছে, বাকি ৯৮ শতাংশই বন্ধ। যাত্রীসংখ্যা কম, তেল খরচের অর্থও উঠছে না তাই শ্যামলী এসপি, সোহাগ, এনআর, সৌদিয়া, গ্রীন লাইন, রয়েল কোচসহ প্রতিটি পরিবহন সংস্থায় তাদের বাস পরিসেবা বন্ধ রেখেছে।

কিন্তু মাস কয়েক আগেও তথাকথিত এই ‘ব্যাড প্যাচ’ বা ব্যবসায়িক মন্দা ছিল না। শুরুটা হয়েছে গত ৫ আগস্ট- ছাত্র অভ্যুত্থানের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। ঘটনার আট মাস কেটে গেলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। নিরাপত্তা ও কর্মী সংকটের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য সাধারণ ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে ভারত সরকার। আবার মেডিকেল ভিসা চালু থাকলেও তা প্রদানের সংখ্যা খুবই কম। আর তার প্রভাব গিয়ে পড়েছে ব্যবসায়। পর্যটকের অভাবে যেমন কলকাতার নিউমার্কেটে প্রভাব পড়েছে, অনেক ব্যবসায়ীরা যেমন তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন বা অন্য ব্যবসায় ঝুঁকছেন ঠিক তেমনি অবস্থা পেট্রাপোল স্থল বন্দরেও।

তবে সম্প্রতি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে শীতলতা আসার পিছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একাংশকে দায়ী করেছেন পরিবহন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আলি হোসেন শেখ। তার মতে, যেভাবে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, দুই দেশের সু-সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

/এটিএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply