Site icon Jamuna Television

পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে ইরান: আইএইএ

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ইরান। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘ফ্রান্স-২৪’ এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও ইরান দাবি করে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি ও পরিদর্শকদের সুযোগ সীমিত করায় বিশ্বব্যাপী শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গ্রোসি ফরাসি সংবাদপত্র লে মন্ডেকে তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে খুব বেশি দূরে নয়। ’

আইএইএ’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০% সমৃদ্ধির খুব কাছাকাছি।

ইরান ইতিমধ্যে ৪২ কেজি উচ্চ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করেছে, যা একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংস্থাটি ইরানের কিছু পারমাণবিক স্থাপনায় পর্যাপ্ত পরিদর্শনের সুযোগ না পেয়ে স্বচ্ছতার অভাবের কথাও উল্লেখ করেছে।

আইএইএ জাতিসংঘের একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। সংস্থাটি বর্তমানে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির সঙ্গে ইরানের সম্মতি তদারকি করার দায়িত্বে রয়েছে।  চুক্তিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ভেঙে যায়। 

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা গত শনিবার (১২ এপ্রিল) ওমানে শুরু হয়েছে। আগামী শনিবার (১৮ এপ্রিল) দ্বিতীয় দফায় এই আলোচনা চলবে।   

দ্বিতীয় দফার আলোচনার আগে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে উইটকফ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইরানকে তার ‘পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ এবং অস্ত্রায়ন কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে’।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উইটকফের মন্তব্যকে ‘পরস্পরবিরোধী’ আলোচনার জন্য ‘অসহযোগী’ বলে অভিহিত করেছেন।  তিনি সাংবাদিকদের বলেন,  ‘আমরা আমেরিকান পক্ষ থেকে বিভিন্ন অবস্থান শুনেছি, যার মধ্যে কিছু পরস্পরবিরোধী। এগুলো সঠিক আলোচনা প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক নয়‘।

এছাড়াও ইরান সরকার জোর দিয়ে বলে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের কর্মকাণ্ডকে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ) লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে এবং নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে।

এদিকে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে এবং দেশটিতে কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা পদক্ষেপ জোরদার করছে।

যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিতে পারে, যা অঞ্চলে যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো ইরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে, যা ইতিমধ্যে সংকটাপন্ন ইরানি অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে দেবে।

/এআই

Exit mobile version