Site icon Jamuna Television

সহসাই কাটছে না রোহিঙ্গা সংকট

রাষ্ট্রদূত রেনসিয়ে টিয়ারিং। ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন রাষ্ট্রদূত। একদিন আগে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে পরিচয় পত্র পেশ করেছেন। তার মানে, ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার পথচলা শুরু গতকাল। পরদিনই কূটনৈতিক রিপোর্টারদের মুখোমুখি তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের পরদিনই ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেট এসোসিয়েশনের ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে কোন রাষ্ট্রদূতের আসার ঘটনা এটাই প্রথম।

নির্ধারিত বক্তৃতার শুরুতেই বাংলাদেশ আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বন্ধুত্বের নানা দিক তুলে ধরেন হাস্যোজ্জ্বল এই কূটনীতিক। ব্যবসা-বাণিজ্যের কথাও ছিল তার আলোচনায়। কিন্তু সব ছাপিয়ে গুরুত্ব পায় রোহিঙ্গা সমস্যা। এই ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা পশ্চিমাদের সমর্থন বাংলাদেশের দিকে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা যে তার নেই, সে কথা গণমাধ্যম কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রেনসিয়ে টিয়ারিং। অবশ্য নির্ধারিত বক্তৃতাতেই তিনি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের প্রসঙ্গ এনেছিলেন। সেখানে চীন ও রাশিয়ার ভূমিকার নেপথ্যে কিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক বিষয়াদী কাজ করেছে, তাও খোলামেলাই বলেছেন এই কূটনীতিক।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ যে সহমর্মিতা-উদারতা আর মানবিকতা দেখিয়েছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক কিংবা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সঠিক পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ। প্রশ্ন আসে, কবে নাগাদ এই রোহিঙ্গা সংকট মিটবে? কিংবা কফি আনান কমিশনের সুপারিশ কি আদৌ বাস্তবায়ন করবে মিয়ানমার সরকার? জবাবে রাষ্ট্রদূত বলছেন, এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের আচরণ সন্তোষজনক নয়। তেমন কোন অগ্রগতিও চোখে পড়ছে না। ফলে রোহিঙ্গা সংকট যে শিগগিরই কাটছে না, সেটি স্পষ্ট করলেন এই ইউরোপীয় কূটনীতিকও। জানিয়েছেন, ৩০ অক্টোবর রোহিঙ্গা সংকট সরেজমিন দেখতে বাংলাদেশ সফরে আসছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন কমিশনার। ৩১ অক্টোবর তিনি কক্সবাজার শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাবেন।

এদিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। মূলত জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ইস্যুতে যে সব উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো গণমাধ্যমকে জানাতে চেয়েছিলেন তিনি। সেখানে মাহমুদ আলী বলেছেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে। মন্ত্রীর যুক্তি, মস্কো এই সমস্যার সমাধানে আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করতে বলেছে। পাশাপাশি ঢাকা-মস্কো যোগাযোগ জোরদার হচ্ছে। প্রয়োজনে রাশিয়ায় সরকার বিশেষ দূত পাঠাতে পারে বলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চীন অবশ্য আনান কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়নের কথা মিয়ানমারকে বলেনি। তারপরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, চীন বাংলাদেশের বিপক্ষে না। মন্ত্রীর যুক্তি, চীনের প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন। মাহমুদ আলীর দাবি, সরকারের পদক্ষেপ সারা পৃথিবীতেই প্রশংসিত হচ্ছে। তবে একদিন, এক সপ্তাহ বা একমাসে এই সংকটের সমাধান হচ্ছে না, সেটি সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ২৩ অক্টোবর মিয়ানমার যাচ্ছেন। সেখানে মূলত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত কিভাবে আরো নিরাপদ ও সুরক্ষিত করা যায়, সেটি নিয়ে দু’দেশ আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, অপর প্রতিবেশী ভারতের সাথে চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমানা। আর মিয়ানমারের সাথে মাত্র ২৭০ কিলোমিটার- সেটি নিরাপদ করা মোটেও কঠিন কাজ নয়।

/মাহফুজ মিশু

Exit mobile version