আরাকান আর্মির নির্যাতনে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

|

ফাইল ছবি।

মনিরুল ইসলাম:

রাখাইনে আরাকান আর্মির ব্যাপক নির্যাতনে মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। ফলে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে নতুন রোহিঙ্গাদের দেখা মিলছে। তাদের দাবি, আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাদের চেয়ে বেশি নির্যাতন চালাচ্ছে।

সরজমিনে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর ৫ নম্বর ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, রাখাইনের মংডু অঞ্চলের বুড়া সিকদারপাড়া গ্রামসহ অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দারা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এদের কেউ কেউ এপ্রিল মাসের শুরুতে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।

পালিয়ে আসারা জানান, বুড়া শিকদারপাড়া গ্রাম থেকে অন্তত ৬০ জনকে নির্যাতন ও গুলিবর্ষণ করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আরাকান আর্মি দখলে নেয়ার পর কোথাও কোথাও আগের চেয়ে রোহিঙ্গা নিধন বেড়েছে।

মোহাম্মদ আলী নামে একজন বলেন, গ্রামের সব বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর সারারাত বাইরে পালিয়ে ছিলাম। পরদিন আরাকান আর্মি আমাদের খুঁজে বের করে নির্যাতন শুরু করে।

মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী বলেন, আরাকান আর্মি আমাদের জিম্মি করে ফেলে। পরে বেশকয়েকদিন লুকিয়ে থেকে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসি।

এই পরিবারের মতো আরও অনেকের সাথে কথা হয় যমুনা টেলিভিশনের। যারা সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। তারা জানান, রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীদের জিম্মি করছে আরাকান আর্মি। তাদের সাথে দাস-দাসীর মতো ব্যবহার করছে। বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। কাউকে কাউকে আবার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে লাগাচ্ছে।

একজন রোহিঙ্গা যুবক বলেন, আরাকান আর্মি আমাকে নির্যাতন করেছে। আমার এক স্বজনকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। আরেকজন বলেন, কিশোর-তরুণদের আরাকান আর্মি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কথামতো কাজ না করলে চরম অত্যাচার করছে।

গত দুই বছর ধরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিধি বাড়েনি। কিন্তু স্থানীয় তথ্য মতে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে। গতবছরের মে ও জুন মাসে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা আসে। নতুন যারা আসছে তাদেরকে আরেকজনের ঘরে জায়গা দেয়া। অন্যদিকে রোহিঙ্গা নেতাদের ধারণা, প্রতিদিন পাঁচশতর বেশি রোহিঙ্গা আসছে।

একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা বলে কোনো জাতি সেখানে থাকবে না বলে আরাকান আর্মি ঘোষণা দিয়েছে। রোহিঙ্গা বলে কেউ পরিচয় দিতে পারবে না। এটাও গণহত্যার চিহ্ন।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের দিয়ে মাদক ও পন্য চোরাচালান করাচ্ছে রাখাইনের নতুন শাসকরা। তবে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছে বাংলাদেশের বাহিনীগুলো।

র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের অনেক পণ্য চোরাচালান হয়ে মিয়ানমার যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বর্তমানে মাদকের সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।

২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন টেকনাফের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সীমান্তের এ পাশে এর যেই প্রভাব পড়ার কথা সেখানে বিজিবি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

এভাবে রোহিঙ্গারা আসতে থাকলে প্রত্যাবাসন দূরে থাক, তাদের থাকা-খাওয়া কীভাবে হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা।

টেকনাফের মিয়ানমার সীমান্তে দেখা যায়, এখনও সেখানের গ্রামে-মহল্লা পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, মাদক চোরাচালানেও আরাকান আর্মির সম্পৃক্ততা রয়েছে।

/আরএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply