বুধবার যমুনা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের

|

মাহমুদুল হাসান ইমন:

আগামীকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠাল তলায় ‘জবি ঐক্য’ নামে নতুন এক প্লাটফর্ম থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

জানা গেছে, গত সোমবার শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিক্ষক সমিতির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জবির বাজেট বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসন বিষয়ে আলোচনা হলেও দাবি মানা হয়নি বলে অভিযোগ তোলে শিক্ষার্থীরা।

তাদের ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট দাবিগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করলেও ইউজিসি বরাবরের মতোই দায়সারা আশ্বাস দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংগঠনের প্রতিনিধিরা একত্রে আলোচনা করে ‘লং মার্চ টু যমুনা’র সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার হাতে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে গত প্রায় ২০ বছর যাবত সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে আমাদের বঞ্চিত করে রেখেছিল বিগত সরকার। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় আমরা আলোচনার করেছি। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির কোনো সুরাহা পাইনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ঐক্য থেকে সবাইকে সাথে নিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য আমরা ‘লংমার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা করেছি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সোহান প্রামানিক বলেন, জুলাই গনঅভ্যুত্থানের পাওয়ার হাউজ খ্যাত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ম থেকে এখন অব্দি বৈষম্যর শিকার হয়ে আসছে। পাঁচ আগস্ট বাংলাদেশের মাটি থেকে বৈষম্যের কবর রচনা হলেও জগন্নাথের ক্ষেত্রে তার পুরোপুরি বিপরীত। তাই বাজেট বৈষম্য দূরীকরণ ও আবাসন ভাতাসহ ৩ দফা দাবিতে বুধবার আমরা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বরাবর লং মার্চ করবো। আমাদের দাবি আদায় হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসূচি অব্যহত থাকবে।

শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্‌দীন বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সাথে শিক্ষার্থীদের কোনো আলোচনা হয়নি। শিক্ষার্থীদের আবাসনের দাবিসহ সবগুলো দাবিই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। তাদের দাবির সঙ্গে শুরু থেকেই আমরা সর্বোচ্চ সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করেছি। তবে, দাবি আদায়ে তাদের এ কর্মসূচির বিষয়ে আগামীকাল সকালে আমরা শিক্ষকরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

ইউজিসির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, আজ উপাচার্যসহ আমরা শিক্ষক এবং ছাত্ররা মিলে ইউজিসিতে একটি বৈঠক করি। সেখানে বাজেট বৃদ্ধি সম্পর্কে ইতোপূর্বে গৃহীত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত, শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, আবাসন ভাতা প্রদানের বিষয়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়। তাছাড়া আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে স্বারকলিপিও দিয়ে এসেছি। তবে, সংশ্লিষ্টরা কিছু দাবি ইউজিসির আওতায় নেই বলে উল্লেখ করেছেন।

‎শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো

‎১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে।

‎২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে। ‎

৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

অন্যদিকে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply