Site icon Jamuna Television

আল-ফাহলাতাইন পর্বত: হজযাত্রার ঐতিহাসিক মিলনস্থল

মদিনার উত্তরে আলউলার পথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক আল-ফাহলাতাইন পর্বত। এটি শুধু একটি ভৌগোলিক নিদর্শন নয়, বরং ইসলামের ইতিহাসে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর তাবুক অভিযানের স্মৃতিবাহী পবিত্র স্থান।

এই পর্বতের নামকরণে রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। এর চূড়ায় অবস্থিত দুটি বৃহৎ পাথর দূর থেকে দেখতে গরুর শিংয়ের মতো লাগে। আরবিতে ‘ফাহল’ অর্থ গরু, সেখান থেকেই এসেছে নাম ‘আল-ফাহলাতাইন’ — অর্থাৎ ‘দুই গরু’।

ঐতিহাসিক আলী আল-সামহুদী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ওফা আল-ওফা বিঅখবার দার আল-মুস্তফা‘-তে উল্লেখ করেন, মদিনা থেকে একদিনের পথ দূরে এই পর্বতের অবস্থান। তিনি এর দ্বিচূড়ার নিচের শিলাকাঠামোর বিবরণও দেন। ফিরুজাবাদী তার “আল-মাঘানিম আল-মুতাবা”-তে নবীজির তাবুকগামী সেনাবাহিনীর পথের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে এই পর্বতের উল্লেখ করেন।

মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আল-মাওলাওয়ি তার ভ্রমণবিবরণ ‘রিহলাত আল-শিতা ওয়াল-সাইফ’-এ জানান, এই দ্বিচূড়াটি পর্বতের পশ্চিম দিকে, মূল পথের পাশে অবস্থিত। অন্যদিকে আল-সুয়াইদী তার ‘আন-নাফহা আল-মিসকিয়্যা ফি রিহলা আল-মাক্কিয়্যা’– গ্রন্থে বলেন, এ পর্বতের নাম এসেছে তার একাকী ও বিশাল অবস্থান থেকে — যেন চারণভূমিতে একটি গরু।

ইতিহাসবিদ ও ইসলামী গবেষক ফুয়াদ আল-মাঘামসি জানান, আল-ফাহলাতাইন বা ফাইফা আল-ফাহলাতাইন পর্বতটি মদিনার উত্তর-পশ্চিমে শাজওয়া গ্রামের নিকটবর্তী। এর উচ্চতা প্রায় ১,০৮৪ মিটার, যেখান থেকে বিস্তীর্ণ সমভূমি ও পাহাড়ি প্রান্তর দেখা যায়।

এই স্থানটি ঐতিহাসিক সিরীয় হজ্বপথ ‘দারব আল-হাজ্জ আশ-শামি’-এর গুরুত্বপূর্ণ বিশ্রামকেন্দ্র ছিল। স্থানীয়ভাবে এটি ‘আন্তারের দুর্গ’ বা ‘আন্তারের আস্তাবল’ নামেও পরিচিত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলছে, এখানে বিশ্রামাগার ও সেবা-সুবিধাসহ একটি উন্নত কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, যা হজ্বযাত্রী ও বণিকদের সেবায় ব্যবহৃত হতো।

সিরীয় হজ্বপথের এই অঞ্চল নবী জীবনী ও হজ্ব ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বহন করে চলেছে আজও।

(আরব নিউজের ফিচার থেকে অনূদিত)

Exit mobile version