বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে জামুকা আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি

|

বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের সাথে সম্পৃক্ত সকল এমএনএ ও এনপিএ, যারা পরে গণপরিষদের সদস্য হয়েছিলেন তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পরিচিত হবেন। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সদস্যরা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ই থাকবেন।

মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে সংশোধিত অধ্যাদেশটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

অধ্যাদেশে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার’ সংজ্ঞায় বলা হয়, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন, যে সকল ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এই দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন- এরকম সকল বেসামরিক নাগরিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

পাশাপাশি সেই সময়ে যাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও সেই সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ-কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যগণ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

তাছাড়া, হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাহাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত সকল নারী (বীরাঙ্গনা), এবং  মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী  ফিল্ড হাসপাতালের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞায় বলা হয়, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন এবং মনস্তাত্তিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে অংশ ও সহযোগিতা করেছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী।

সহযোগীদের মধ্যে রয়েছে, যেসকল পেশাজীবীরা বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যারা বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দূত এবং সেই সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স বা অন্যান্য সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরা। 

তাছাড়া, মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সাথে সম্পৃক্ত সকল এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) বা এমপিএ (মেম্বার অব প্রভেনশিয়াল অ্যাসেম্বলি), যারা পরবর্তীতে গণপরিষদের সদস্য হিসাবে গণ্য হয়েছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।

পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সকল শিল্পী, কলা-কুশলী, দেশ ও দেশের বাহিরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সকল বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলও মুক্তযুদ্ধের সহযোগী।

/আরএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply