কোভিড শিশুদের ওপর রেখে গেছে দীর্ঘমেয়াদী চিহ্ন

|

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি যখন আবির্ভূত হলো, বিশ্বজুড়ে এলোমেলো করে দিলো পারিবারিক জীবন। একযোগে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়া, বাসাবন্দি থাকা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করা ইত্যাদি জিনিস এই প্রজন্মের কাছে ছিল অপরিচিত। এই মহামারি এসে সেটার পরিচিতি ঘটাল।

করোনার কারণে শুধু বড়দের মধ্যেই সামাজিক-অর্থনৈতিক বা মানসিক প্রভাব পড়েনি, বরং শিশুদের মধ্যেও সামাজিক-মানসিক প্রভাব পড়েছে। অতিমারির চাপ ও দীর্ঘদিনের আইসোলেশন শিশুদের মনে গভীর ছাপ ফেলে গেছে। অনেকের আচরণে এসেছে পরিবর্তন। পাশাপাশি, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (৭ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক, বিজ্ঞান লেখক ক্যাথারিন গ্যামনের একটি বিশেষ প্রতিবেদন।

এতে উল্লেখ করা হয়– যুক্তরাষ্ট্রের প্রিস্কুল শিক্ষক রেবেকা আন্ডারউড লক্ষ্য করেছেন, ২০২৫ সালের শিশুরা শারীরিকভাবে অনেক বেশি সতর্ক, ছোটবেলায় বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে এটি হতে পারে। এরা কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার সময় নবজাতক ছিল।

২০২০ সালের মার্চে বিশ্বব্যাপী স্কুলগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। শিশুরা ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। অনলাইনে স্ক্রিনের সামনে পড়াশোনা করে। লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যায়। দিন-রাতের রুটিন বদল হয়। খেলাধুলা, সামাজিক মেলামেশা ও গুরুত্বপূর্ণ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হয়। এসবের পরিবর্তে তারা গার্হস্থ্য কার্যকলাপ, হস্তশিল্প বা টেলিভিশনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অনেকে স্কুলের অনুষ্ঠান, পার্টি বা গ্র্যাজুয়েশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো থেকেও বঞ্চিত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক বছর অব্দি শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের দেখা পাননি।

শৈশবের অভিজ্ঞতা জীবনের গতিপথে গভীর প্রভাব ফেলে। কারণ তা মস্তিষ্কের বিকাশ, আচরণ ও সামগ্রিক সুস্থতায় পরিবর্তন আনতে পারে। এই ঘরবন্দি অভিজ্ঞতা আগামী প্রজন্মের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০২১ সালে স্কুল পুনরায় খোলার পরপরই শিক্ষক রেবেকা আন্ডারউড ও তার সহকর্মীরা শিশুদের আচরণে পার্থক্য লক্ষ্য করেন। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু উন্নতি দেখা যাচ্ছে তবুও শিশুদের সহজেই অতিরিক্ত উদ্দীপনায় অভিভূত হতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আন্ডারউডের স্কুলে সঙ্গীত ক্লাস বন্ধ করতে হয়েছিল, কারণ বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শিশুদের ক্ষেত্রে খুব বেশি মাত্রার ছিল। অনেক শিশু বিশৃঙ্খল পরিবেশে মানসিক চাপ অনুভব করতো।

আন্ডারউড মনে করেন, ছোটবেলায় সংগীত বা খেলাধুলার অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা এখন জোরে শব্দ বা বিশৃঙ্খল পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারছে না। তবে এবার ধীরে ধীরে পাঠ্যক্রমে সংগীতকে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

কোভিডের পাঁচ বছর পর, বিশেষজ্ঞরা এখন বুঝতে পারছেন যে, হঠাৎ সামাজিক পরিবর্তনের ফলে শিশুদের আচরণ, মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক দক্ষতা ও শিক্ষায় কী ধরনের প্রভাব পড়েছে। তবে এই প্রভাব কতটা গভীর ও দীর্ঘমেয়াদী হবে, তা পুরোপুরি বোঝা যাবে আরও কয়েক দশক পর।

(প্রতিবেদনটি ঈষৎ সংক্ষেপিত)

/এএম



সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply