পোষা প্রাণী ও এক হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতার গল্প

|

কানাডার খ্যাতিমান ধর্মতত্ত্ববিদ জেমস টেলরের জীবন বদলে দিয়েছিল একটি কুকুর। তিনি ১৫টি বই লিখেছেন বিশ্বাস ও শোক নিয়ে। পড়িয়েছেন বিভিন্ন কলেজে ধর্ম। পেয়েছেন সম্মানসূচক ডিভিনিটি ডিগ্রি। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় শিক্ষক ছিল ‘ব্রিক’ নামে একটি আইরিশ সিটার কুকুর।

ব্রিককে তিনি ও তার স্ত্রী জোয়ান উদ্ধার করেছিলেন। প্রথম রাতেই কুকুরটি টেলরের ঘরের বাতি ও চশমা ফেলে দেয়। আর অ্যালার্ম ঘড়িও ফেলে দেয় মেঝেতে। সকালে টেলর ঘুম থেকে উঠে দেখেন, ব্রিক ল্যাম্পশেডে পা ঢুকিয়ে ঘুমাচ্ছে।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে, ব্রিক হয়ে ওঠে টেলরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অসুস্থতায় পাশে থেকেছে, নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়েছে। টেলর বলেন, জীবনের গভীর কিছু মুহূর্ত—প্রেমে পড়া, সন্তানের হাত ধরা বা মেয়েকে বিয়ের মঞ্চে হাঁটতে দেখা—এমন অভিজ্ঞতার মতো হতে পারে পোষা প্রাণীর সঙ্গে কাটানো নানা স্মৃতিও।

টেলর বলেন, ‘আমি বুঝেছি, ঈশ্বর শুধু শব্দ দিয়ে কথা বলেন না, অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও বলেন। আর প্রাণীরা সে অভিজ্ঞতার অংশ।’

প্রাণীরা মানুষকে সুস্থ করতে পারে:

জেমস টেলরের জীবনে পরপর শোক এসেছে—ছেলে স্টিফেন মারা যায়, মা ক্যান্সারে ভুগে চলে যান, বাবাও মৃত্যুর আগে কষ্টে ছিলেন।

টেলর একদিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। সেদিন প্রথমবার ব্রিক এসে তার পাশে শুয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ‘ব্রিক বুঝেছিল আমি কষ্টে আছি।‘

টেলরের মতে, ‘পোষা প্রাণীরা আমাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেয়। ঈশ্বরের মতোই।‘

গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণী রক্তচাপ ও কর্টিসল হরমোন কমায়। এমনকি কুকুর মালিকদের বিপদ আগে থেকে টের পায়।

গবেষণায় দাবি করা হয়, কারাগারেও পোষা প্রাণী রাখার সুযোগ পেলে বন্দিদের আচরণ বদলে যায়। তারা সহানুভূতি শেখে।

বিশ্বাস, দেখা হবে আবার:

ব্রিক মারা যাওয়ার দিন সকালে শেষবারের মতো সে টেলরের অন্তর্বাস লুকিয়ে রাখে। যেন বলতে চায়—আমি এখনও খেলতে চাই।

টেলর বলেন, তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে প্রাণীরও আত্মা আছে।

তিনি বলেন, ‘জানিনা স্বর্গ ঠিক কেমন। কিন্তু আমরা যাদের ভালোবাসি, তারা সেখানেই থাকবে—হোক তা একটি কচ্ছপ বা একটি কুকুর।’

তার মতে, জীবনের আসল অর্থ সম্পর্কেই। ব্রিক কোনো ক্ষমতা রাখত না, কিছুর মালিকও ছিল না। কিন্তু সে জানত, সে আমার ভালোবাসা পেয়েছে, আমার হৃদয়ে রয়েছে।

পোষা প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতা:

মহামারির পর একাকীত্ব বেড়েছে। এমন সময় অনেকেই পোষা প্রাণীকে জীবনের সঙ্গী ভাবেন। লেখক ও বৌদ্ধ চিন্তাবিদ ডেভিড মিচির মতে, ‘অনেকেই মনে করেন, তাদের পোষা প্রাণী আধ্যাত্মিক যাত্রার সঙ্গী।‘

আমেরিকায় এখন অন্তত ৬৬% মানুষ পোষা প্রাণী রাখেন। ১৯৮৮ সালে এটি ছিল ৫৬%। প্রায় সবাই তাদের পোষা প্রাণীকে পরিবারের সদস্য ভাবেন।

প্রাণীরা মানুষকে ক্ষমা, ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতার শিক্ষা দেয়। তারা যেমনভাবে মানুষের ভালো-মন্দ মেনে নেয়, তা অনেকটা ধর্মীয় অনুপ্রেরণার মতোই।

প্রাণী ও ধর্মের সম্পর্ক বহু পুরনো:

প্রাচীন মিশরে বিড়ালকে দেবতা হিসেবে পূজা করা হতো। অনেকে বিশ্বাস করতো, মৃতের সঙ্গে প্রাণীও পরপারে সঙ্গী হয়। আজকের পৃথিবীতেও বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, প্রাণীদের আত্মা বা আধ্যাত্মিক শক্তি থাকে।

পোপ ফ্রান্সিস একবার এক শিশুকে বলেছিলেন, ‘স্বর্গে আমাদের প্রাণীদেরও স্থান আছে।‘ মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘একটি নিরপরাধ ভেড়ার প্রাণও মানুষের মতোই মূল্যবান।‘

(সিএনএন’র ফিচার অবলম্বনে )

/এমএমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply