যুক্তরাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

|

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত ১০ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে সমর্থন দিতে পৃথকভাবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন।

গত ১১ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে সঙ্গে নিয়ে গভর্নর যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইমস এজেন্সি (এনসিএ) পরিদর্শন করেন। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সমন্বয় কেন্দ্রের প্রধান ড্যানিয়েল মারফিসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন।

সেখানে বাংলাদেশি দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত ও সম্পদ পুনরুদ্ধারে সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করা হয় এবং ভবিষ্যতে এ সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করা হয়।

গভর্নর যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ এনসিএ কর্তৃক জব্দ করার জন্য ধন্যবাদ জানান। গত মাসে বেক্সিমকো গ্রুপের শায়ান রহমান এবং শরিয়ার রহমানের ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ জব্দের পর এনসিএ জাভেদের সম্পত্তি জব্দের সিদ্ধান্ত নেয়।

গভর্নর আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে এনসিএ/আইএসিসিসি-এর সঙ্গে আরও গভীর সহযোগিতা হবে এবং যুক্তরাজ্যে মোট ২৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ জব্দের এই উদ্যোগ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মানি লন্ডারিং গন্তব্যস্থলের সরকারগুলোকেও অনুপ্রাণিত করবে, যাতে তারা বাংলাদেশের সম্পদ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে অনুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এনসিএ সফর শেষে গভর্নর একটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক আইন সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত সম্পদ পুনরুদ্ধার গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

এই গোলটেবিলে ওমনি ব্রিজওয়ে ও বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটাল-এর মতো প্রধান কয়েকটি মামলা-মোকদ্দমার তহবিল প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, পাশাপাশি আলভারেজ অ্যান্ড মারসাল এবং সোভেরেইন অ্যাডভাইজরি/স্ট্র্যাটকমস-এর ইউনিটাস গ্লোবাল নামক তদন্ত ও কৌশলগত পরামর্শদাতা সংস্থাগুলো উপস্থিত ছিল।

গভর্নরের লক্ষ্য—২০২৫ সালের মধ্যে ৩০টি মামলার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার লিটিগেশন ফান্ডিং সংগ্রহ—কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে রোডম্যাপ আলোচনা হয়। অনেক অংশগ্রহণকারী জোর দেন, দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এনডিএ চুক্তি স্বাক্ষর করে তাদের অপ্রদত্ত ঋণের তথ্য শেয়ার করা এবং সম্পদ অনুসন্ধান ও আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন।

গভর্নর রাউন্ডটেবিলের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন—যেখানে বলা হয়, একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত প্রতিষ্ঠান (এসপিভি) তৈরি করে যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের মতো লক্ষ্যমাত্রাভুক্ত দেশে আইনি দাবি উত্থাপন করে সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে।

এছাড়াও গভর্নর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরকের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন এবং দেশের ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজারে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

গভর্নরের সঙ্গে লন্ডনের লর্ড মেয়র ও অগ্রণী ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদেরও বৈঠক হয়। সেখানে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ‘সিটি অব লন্ডন’-এর বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় তিনি লর্ড মেয়রকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

এছাড়া তিনি লন্ডনে অবস্থিত কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গেও বৈঠক করেন, যাতে রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ ও কার্যকর করা যায় এবং বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহ যেভাবে বাড়ছে, সেটিকে কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী করা যায়, সে বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

/এসআইএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply