ইসরায়েলর হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কতখানি ক্ষতি হয়েছে?

|

ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ভয়াবহ তাণ্ডবেও অপরিবর্তিত দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দাবি, নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি হলেও সচল রয়েছে ইরানের দ্বিতীয় বৃহৎ ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রের কর্মসূচি। ফলে ইসরায়েলি হামলার প্রধান উদ্দেশ্য যা ছিল সে মিশনে সফল হয়নি তেলআবিব।

অপারেশন রাইজিং লায়নের শুরুতেই ইরানের প্রধান পারমাণবিক কেন্দ্র নাতাঞ্জে হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর আঘাত হানা হয় ফোর্দো নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে। তেল আবিবের দাবি ছিল, এই হামলায় ইরান তার পারমাণবিক সক্ষমতা হারাবে।

নেতানিয়াহু প্রশাসন বলছে, হামালার কারণে তেজস্ক্রিয় দূষণ দেখা দিয়েছে নাতাঞ্জে। ক্ষয়ক্ষতিরও হয়েছে ব্যাপক। ইরানের ইসফাহান প্রদেশে অবস্থিত এই নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাটির ভূর্গর্ভে আছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কাজে ব্যবহৃত হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজ মেশিন।

তবে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত এই ভয়াবহ হামলার পরও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে ভিন্ন কথা। দাবি- তেলআবিবের মিসাইল কিংবা ড্রোনে কেবলমাত্র অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে তেহরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর। অবকাঠামোগত ক্ষতি সারিয়ে নিতে পারলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারবে ইরান।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ড্যানিয়েলা প্লেটকা বলেন, ইসরায়েল কি ইরানের পরমাণু প্রকল্প পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে? উত্তর হলো না। তবে তারা এই প্রকল্পের কাজকে কিছু পিছিয়ে দিতে পারে। কারণ জ্ঞান কখনও ধ্বংস করা যায় না।

দ্যা ইকোনোমিক টাইমস, নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, নাতাঞ্জের কিছুটা ক্ষতি হলেও ইরানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রটির ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল। দেশটির কোম শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভূর্গভস্ত এই পারমাণবিক কেন্দ্রটির অবস্থান। স্থাপনাটিকে এক সময় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরে এটি দেশটির পরমাণু কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।

ফোর্দো তে হামলা হলেও তা এড়িয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে পারমাণবিক স্থাপনাটির কয়েক স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থা। ফোর্দোকে অকেজো করতে প্রয়োজন ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট বোম। যাকে ডাকা হয় মাদার অফ অল বোম হিসেবে। আর ইসরায়েলের কাছে এই বোমা না থাকায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন তেহরানের পারমাণবিক সক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করতে বহু কাঠখোর পোড়াতে হবে তেলআবিবকে।

অতীত থেকেও দেখা যায়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচীর দীর্ঘমেয়াদি কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। ২০১০ সালে নাতাঞ্জে স্টাক্সনেট সাইবার এটাকে অকেজো হয়েছিল হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজ। তবে এত বড় সাইবার অ্যাটাকও ইরান দুই বছরের মধ্যেই সামলে নিয়েছিল।

/এটিএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply