ফরিদপুরে নারী পাচার মামলায় ২ নারীর যাবজ্জীবন

|

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরে নারী পাট শ্রমিককে (২২) সুন্দরবনে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করে পতিতাপল্লীতে বিক্রির ঘটনায় দুই নারী সহকর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছে- সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার বৈশাখালী গ্রামের আমীর আলী মোল্যার মেয়ে মাকসুদা বিবি (৩৫) ও আটি রোপর এলাকার মতিয়ার পালের মেয়ে মর্জিনা ওরফে সোনালী (২৫)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক ছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পারোয়ানা জারি করা হয়।

বুধবার দুপুর দেড়টায় ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামীমা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ২০১২ সালের ২৯ মে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মানব পাচার আইনে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী ওই নারী শ্রমিকের মা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী ও তার দুই মেয়ে ফরিদপুরের কানাইপুর করিম জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন এবং একই মিলে আসামি মাকসুদা বিবিও কাজ করতেন। এছাড়া তারা একই মালিকের বাসায় ভাড়া থাকতেন। এর সুবাদে তাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন মাকসুদা বিবি।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, সম্পর্কের সুবাদে আসামি মাকসুদা তার গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠানের কথা বলে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং সুন্দরবন ঘুরে দেখাবে বলে জানান। একপর্যায়ে ২০১২ সালের ৮ মে তার বড় মেয়ে (২২) মাকসুদার সাথে চলে যান। পরবর্তীতে তাকে সুন্দরবন দেখানোর কথা বলে ভারতে পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেয়া হয়। এরপর একটি ভারতীয় নাম্বারে ফোন আসে এবং জানানো হয়- তার মেয়েকে পাচার করে কলকাতায় একটি পতিতা পল্লীতে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনার পরে একই বছরের ১৮ মে কলকাতা পুলিশ ওই পতিতা পল্লীতে অভিযান পরিচালনা করেন এবং ওই মেয়েটিকে উদ্ধার করে জিম্মায় রাখেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের মাধ্যমে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করেন সংগঠনটির সদস্য এবং ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী শামসুন্নাহার নাইম।

তিনি বলেন, কলকাতা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে সেখানকার একটি সেফহোমে রাখেন। পরে সেফহোমের কর্মকর্তা সুনন্দ বোস আমাদের ঢাকা অফিসের সাথে ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযাগ করেন। পরে আমরা বিস্তারিত জেনে মেয়েটির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি এবং ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। এরপর আমার সহযোগিতায় মাকসুদা বিবিকে একমাত্র আসামি করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলাটি করা হয়।

এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন উপ-পরিদর্শক আবুল খায়ের। মামলার তদন্তকালে মানবপাচার চক্রের সদস্য মর্জিনা ওরফে সোনালীর জড়িত থাকার প্রমাণ পান। পরে ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম রব্বানী ভূইয়া রতন বলেন- মামলা দায়েরের পর রাষ্ট্রপক্ষ মোট সাতজনের সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে এবং মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত যাবজ্জীবন রায় প্রদান করেছে। এ রায়ের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয় যে, কেউ মানব পাচারের মতো অপরাধ করে পার পাবে না, তাকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তবে এ রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুন্নাহার নাইম। তিনি বলেন- আজ এক যুগের বেশি সময় যাবৎ স্পর্শকাতর মামলাটি নিয়ে আমি কাজ করে এসেছি। মামলা পরিচালনা করার সক্ষমতা মেয়েটির পরিবারের নেই এবং আজও ভুক্তভোগী মেয়েটির বিয়ে হয়নি। আশা করেছিলাম, জড়িতদের ফাঁসির রায় হবে।

তিনি আরও বলেন- জড়িতরা একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র। বিশেষ করে এরা বিভিন্ন মিল-কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে নারী শ্রমিকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর বিভিন্ন কৌশলে পাচার করে দেয়া হয়।

/এটিএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply