৩ হাসপাতালে ৮১ জুলাই যোদ্ধা, প্রয়োজন ছাড়া অনেকে আছেন মাসের পর মাস

|

হাসান মিসবাহ:

জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আহতদের জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। তবুও টানাপোড়েন কাটছে না হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসকরা ভর্তি থাকার দরকার নেই, মর্মে বিবৃতি দিলেও মানছেন না আহত হিসেবে ভর্তিরা।

দিনের পর দিন কেবিন ও ওয়ার্ড ধরে রাখছেন তারা। বলছেন, প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ায় হাসপাতাল ছাড়ছেন না। বিপরীতে অভিযোগ উঠছে, শুধু বাড়তি সুবিধার আশায় এমনটি করছেন মুষ্টিমেয় কয়েক জন।

সম্প্রতি, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় লিফট, সিড়ি ও করিডোরের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। অনেক গুরুতর রোগীও আছে তাদের মধ্যে।

তবে, ভিন্ন চিত্র ভবনের তিন ও চার তলার দুটি ওয়ার্ডে। খালি পড়ে আছে ৬৭টি বেড। সেখানেই চিকিৎসা দেয়া হয় জুলাই আন্দোলনে আহতদের। ভর্তি আছেন ২৯ জন।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কেনান বলেছেন, তাদের সকলের অবস্থা স্থিতিশীল। তাদের যে ফলোআপ চিকিৎসা, এটির জন্য আসলে হাসপাতালে থাকা জরুরি নয়। তারা ইচ্ছা করলে বাড়ি থেকে এসে বা তাদের নিকটস্থ আত্মীয়-স্বাজনের বাসা থেকে এসে তারা ফলোআপে পরবর্তী পরামর্শ নিতে পারে।

আহত হিসেবে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন ৪ জন। তারা বলছেন, বিদেশে না পাঠালে ছাড়বেন না হাসপাতাল।

জুলাই আন্দোলনে আহত নুর আলম বললেন, আমাকে দিয়ে পাসপোর্ট বানানো হয়েছে, আমাকে রেফার করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক, এটাই আমার চাওয়া।

এই হাসপাতালে ইমরান থাকছেন ভর্তি ছাড়াই। সরকারিভাবে সিঙ্গাপুরেও চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। জুলাই আন্দোলনে আহত এই তরুণের দাবি, সিঙ্গাপুরে ভালো ট্রিটমেন্ট নেই।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ কেবিনের সবই বরাদ্দ জুলাই যোদ্ধাদের জন্য। চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৮ জন।

জুলাই আন্দোলনে আহত সোহানুর রহমান বলেছেন, আমরা তাদেরকে বলি, যদি আমাদের ট্রিটমেন্ট না থাকে বাংলাদেশে, তাহলে কোথায় হবে? এমন একটা কিছু যদি আমাদের জন্য করে দেন, তাহলে আমরা এই হাসপাতালের জীবন থেকেও মুক্তি পাই এবং উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আমাদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের কিছু আংশিক হলেও ফেরত পেতে পারি।

জুলাই যোদ্ধাদের অনেকে ভর্তি আছেন ১০ মাস ধরে। কারও কারও উন্নতির সম্ভাবনা কম। তারপরও সুস্থতার আশায় থাকছেন তারা। অনেকে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত।

আন্দোলনে আহত আরেকজন বললেন, কিছু লোকের থাকার কোনও প্রয়োজনীয়তা নাই। কিন্তু সে কেন থাকতেছে সেই ধরনের কোনও কিছু ওর ভেতরে থেকে পাওয়া যায় না। তবে লোকমুখে বা বাহির থেকে ওই ধরনের রোগীদের ইনফরমেশন পাওয়া গেছে, এরা কোনও না কোনও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য বা নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করার জন্য হাসপাতালে থেকে যাচ্ছে।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. বদিউজ্জামান বললেন, ওরা মনে করে যে এখান থেকে যদি চলে যায় তাহলে তো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবো। এখান থেকে যত সুবিধা নেয়া যায় এটা, এমন একটি বিষয় ওদের মধ্যে কাজ করে।

তবে, ভর্তি থাকা আরেক আহত তরুণের দাবি, দীর্ঘ ১১ মাস ধরে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। দেয়া হলে তাদের চোখের এই অবস্থা হতো না। এতদিনে বাড়ি ফিরে যেতেন।

তিনটি হাসপাতালেই বিভিন্ন বিষয়ে টানাপোড়েন চলছে কর্তৃপক্ষ ও আহতদের মধ্যে। আছে পাল্টিপাল্টি অভিযোগ।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, অধিকাংশ স্টাফ তাদেরকে এড়িয়ে চলে, ওখানে যেতেই চায় না। তারা এখানে তদবিরে জড়িত, সিরিয়াল আগায় দিতে হবে এই রকম তদবির করে এবং এর বিনিময়ে তারা টাকা নিত এ রকম কিছু অভিযোগ পেয়েছি ।

গত ২৮ মে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞানে সংঘর্ষে আহত হন কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স। হাসপাতাল বন্ধ থাকে ১৮ দিন। এরপর বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। পঙ্গু হাসপাতালেও পুলিশ পাহারায় জুলাইয়ে আহত রোগীদের দেখছেন চিকিৎসকেরা।

শেরে বাংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বলেছেন, আমাদের কাছে কিছু বার্তা আছে, কর্তৃপক্ষের নিদের্শনায় সেই বার্তার ভিত্তিতে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। কারণ, আপনারা জানেন ঈদের পরে রোগীদেরও ঝামেলা বেশি।

উল্লেখ্য, জুলাই যোদ্ধাদের জন্য আছে আলাদা স্বাস্থ্য কার্ড। দেশের যেকোনো সরকারি হাসপাতালে তারা সেবা নিতে পারেন বিনামূল্যে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply