
‘বার্নআউট’ শব্দটি হয়ত কেউ শুনেছেন, কারও কাছে নতুন। এটি সাধারণত মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তি যা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ এবং কাজের অতিরিক্ত চাপ থেকে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত সাধারণ ক্লান্তি থেকে ভিন্ন। যেখানে ব্যক্তি কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা অনুভব করে।
আজকাল ব্যস্ত জীবনে এই ‘বার্নআউট’ খুব সহজ বিষয়ই হয়ে গেছে। তাই আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি কি শুধুই ক্লান্ত, নাকি বার্নআউট বা জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষ?
ক্লান্তি বনাম বার্নআউট:
স্বাভাবিক ক্লান্তি সাধারণত সাময়িক। এক রাত ভালো ঘুম, ছুটির দিন বা বিরতি নিলেই শরীর-মন চাঙ্গা হয়। কিন্তু বার্নআউট মানসিক অবসাদ, কাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা ও আত্মপরিচয়ের সংকট সৃষ্টি করে।
ইনকোরা হেলথের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মারজোরি জেনকিন্স বলেন, ‘বার্নআউট আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে, উদ্দীপনা নষ্ট করে এবং মানসিক সুস্থতাকে ধ্বংস করে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদী চাপ আমাদের মস্তিষ্কের কাঠামো ও কার্যক্ষমতা পরিবর্তন করে। ২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, বার্নআউটে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অংশের ক্ষমতা কমে যায়। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বার্নআউট মস্তিষ্কের অ্যামিগডালাকে অতিসক্রিয় করে তোলে, ফলে উদ্বেগ বেড়ে যায় এবং মানুষ সহজে শান্ত হতে পারে না।
বার্নআউটের কারণ:
ব্রেইন.এফএম-এর সায়েন্স ডিরেক্টর কেভিন জে.পি. উডস জানান, ‘বার্নআউট মানে মস্তিষ্কের চাপ ব্যবস্থাপনার ভেঙে পড়া।’
প্রাচীন সময়ে হঠাৎ চাপের মোকাবেলায় মস্তিষ্ক দক্ষ ছিল। কিন্তু আধুনিক জীবনের লাগাতার চাপ সেই ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়।
অতিরিক্ত কাজের চাপ, নিয়ন্ত্রণের অভাব, স্বীকৃতি না পাওয়া, বাজে কর্মপরিবেশ, ব্যক্তিগত জীবনের ভার এবং প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া—সব মিলেই বার্নআউটের জন্ম দেয়।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?:
সাধারণত জরুরি পরিষেবার সঙ্গে জড়িতরা বার্নআউটের বেশি ঝুঁকিতে। যেমন চিকিৎসা, শিক্ষা, সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িতরা। তারা সবসময়ই অতিরিক্ত কাজ ও পারিপার্শ্বিক নানা চাপে থাকেন। এছাড়া যারা কর্মস্থলে মানসিক সমর্থন পান না তারাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। এছাড়া কেয়ারগিভার যারা নানা শারীরিক সঙ্কট চোখের সামনে দেখে অভ্যস্ত, তারাও একসময় বার্নআউটের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। যারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার।
বার্নআউট থেকে পুনরুদ্ধার:
বার্নআউট কাটাতে সময় লাগে। একে কাটিয়ে উঠতে ৩-৬ মাস নিয়মিত ঘুম, ব্যায়াম, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং ৯০ মিনিট পরপর কাজে ছোট বিরতি নেওয়া জরুরি।
আপনি যদি সবসময় ক্লান্ত, নিরুৎসাহ ও বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন, তাহলে হয়তো আপনি শুধু ক্লান্ত নন—বার্নআউটের শিকার। তাই এখনই সচেতন হওয়া দরকার।
(টাইম ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত)
/এমএমএইচ



Leave a reply