Site icon Jamuna Television

ইতিহাস বদলে দেয়া ‘জুলাই আন্দোলন’ শুরু হয় আজ

আহমেদ রেজা:

সরকারি চাকরিতে ‘কোটা প্রথা’ বাতিলের দাবিতে অরাজনৈতিক ব্যানারে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি, যা ধীরে ধীরে পরিণত হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। ৭২ সাল থেকে চলে আসা বৈষম্যমূলক পদ্ধতি সংস্কার চেয়ে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়, চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে। লাগাতার আন্দোলনে ক্ষুব্ধ ও বাধ্য হয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৪৬ বছরের কোটাব্যবস্থা বাতিল করে দেন শেখ হাসিনা।

কোটা বাতিলের কয়েক বছর না যেতেই ‘দুষ্টু বুদ্ধি’ মাথায় আসে তখনকার সরকারের। ২০২৪ সালের ‘৫ জুন’ আবার বহাল করানো হয় আদালতের মাধ্যমে। এতে আবারও শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। এরপর ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারকে আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। চলতে থাকে আন্দোলনের প্রস্তুতি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সকল সহযোদ্ধাসহ পরিকল্পনা করলাম যে সবাই মিলে একটি জোরালো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে হবে। এরপর একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হলো। জুনের সময়টাতেই কয়েকদিন আন্দোলন হলো। সেই সময় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলো। ঠিক সেই সময়টাতেই সিদ্ধান্ত নিলাম গোটা দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করলাম।

সরকার কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করে। এটি পুনর্বহাল চেয়ে ১ জুলাই শুরু হয় ধারাবাহিক আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা এক প্লাটফর্মে গঠন করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। প্রথমদিন থেকেই তাদের সংবাদ প্রচারে গুরুত্ব দেয় যমুনা টেলিভিশন।

বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে গ্রন্থাগার থেকে মিছিল শুরু হয় বেলা ১১টায় । রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে আন্দোলন ও সমাবেশে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আহ্বান জানান, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত সুরাহার।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ২৮ ও ২৯ জুন সবাই মিলে পরিকল্পনা করে নাম ঠিক করলাম ব্যানারের নাম হবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। ১ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শুরু করি। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত যাই। সেখানে দাঁড়িয়ে আগামী ২ থেকে ৩ দিনের একটি কর্মসূচি দেই।

একইদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। এছাড়া জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। স্পষ্ট হতে থাকে তীব্রতার লক্ষণ।

জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ওই সময়ে একটি সুবিধা হয়েছিল যে শিক্ষকদের পেনশন স্কিম বাতিল করায় তারাও আন্দোলন করছিলেন। ফলে শিক্ষার্থী যারা ছিল, তাদের ক্লাস কিংবা পরীক্ষার চাপ ছিল না। ফলে বিশাল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি আমরা ১ জুলাই দেখতে পাই। মূলত, সেই বিশাল জনসমাগম আমাদের সাহস ও স্পৃহা অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যেহেতু আমরা বিরাজনীতিকরণের একটা সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তাই আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ‘ভাষা’। ওই সময়ে রাজনীতি বিমুখ যেসব মানুষ ছিলেন, তাদের মাঝে ভাষাগত নতুনত্ব সম্পৃক্ত করতে পেরেছি।

সেই জুলাইয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত ছুঁড়ে ফেলে পরম প্রতাপশালী শেখ হাসিনাকে। টিকতে না পেরে ৫ আগস্ট তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। শুরু হয় ‘বাংলাদেশ 2.0’ যাত্রা।

/এআই

Exit mobile version