হিন্দি সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনেতা, নির্মাতা ও প্রযোজক গুরু দত্তর জন্মশতবার্ষিকী আজ। পিয়াসা, কাগজ কে ফুল, এবং সাহিব বিবি অউর গুলাম-এর মতো কালজয়ী চলচ্চিত্রের নির্মাতা দত্ত ছিলেন এক সংবেদনশীল শিল্পী, যার কাজে মিলেছে গভীর মেলানকলি আর কবিতার মতো সৌন্দর্য।
১৯২৫ সালে ব্যাঙ্গালোরে বাসন্ত কুমার শিবশঙ্কর পাড়ুকোন নামে জন্ম নেয়া গুরু দত্ত কলকাতায় বেড়ে ওঠেন। উদয় শঙ্করের নৃত্যশালায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি প্রভাত ফিল্ম কোম্পানিতে কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তার পরিচালনায় অভিষেক হয় বাজি (১৯৫১) দিয়ে, যেখানে নায়ক ছিলেন দেব আনন্দ। এরপর তিনি আর-পার (১৯৫৪), মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ’৫৫ (১৯৫৫) এবং পিয়াসা (১৯৫৭)-এর মতো সিনেমা নির্মাণ করেন।
কাগজ কে ফুল (১৯৫৯) গুরু দত্তের ব্যক্তিগত ও শৈল্পিক সিনেমা ছিল, যা বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়েছিল—ঠিক যেমনটা হয়েছিল সিনেমার নায়ক (এক ব্যর্থ চলচ্চিত্র নির্মাতা) সুরেশ সিনহার ভাগ্যে। এই ব্যর্থতা তাকে গভীরভাবে আহত করেছিল। এরপর তিনি আর কখনও পরিচালনা করেননি, তবে প্রযোজনা ও অভিনয় চালিয়ে গেছেন।
১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে, মুম্বাইয়ের বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে অত্যধিক ঘুমের ওষুধ সেবন ধরা হলেও, আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা—তা আজও রহস্য।
পিয়াসা (১৯৫৭) সিনেমাটি সমাজের নিষ্ঠুরতা আর কবি বিজয়ের (গুরু দত্ত) আকাঙ্ক্ষার করুণ গল্প নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, কাগজ কে ফুল হলিউডের ‘সানসেট বুলেভার্ড’-এর মতো ট্র্যাজিক, যা পরবর্তীতে কাল্ট ক্লাসিকে পরিণত হয়।
গুরু দত্তের সিনেমায় একাকিত্ব, ব্যর্থতা, এবং শিল্পীর সংঘাত এমনভাবে ফুটে উঠেছে যা আজও দর্শককে নাড়া দেয়। তার ভিজ্যুয়াল স্টাইল (শ্যাডো-লাইটের নাটকীয় ব্যবহার) এবং গীতিকার সাহিত্যিক গুণ ভারতীয় সিনেমাকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল।
গুরু দত্তের সিনেমা সম্পর্কে আমেরিকান চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ মার্টিন স্কোরসেজি বলেন, ‘গুরু দত্ত শুধু ফিল্ম মেকার ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন কবি—যাঁর ক্যামেরা ছিল কলম।’
সূত্র: দ্য হিন্দু, বিবিসি।
/এআই

