মাহফুজ মিশু, কক্সবাজার থেকে ফিরে:
২৬ জুন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত। জিরো লাইনের আশপাশেই গরু চরাচ্ছিলেন ইউনূস নামের এক ব্যক্তি। হঠাৎ স্থল মাইন বিস্ফোরণ। সাথে সাথে উড়ে যায় তার একটি পা।
এর দু’দিন আগে ২৪ জুনও স্থলমাইন বিস্ফোরণে পা হারান আরেকজন। স্থানীয়দের দাবি, গত ছয় মাসে ৫০টির মতো মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে।
আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী, মাইন স্থাপন করলে অপর পক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে। সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি অবশ্য এর ধারই ধারে না। এসব ঘটনায় চরম আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রতিবেশি মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের স্থলসীমা ২৭১ কিলোমিটার। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সাথে লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য।
দীর্ঘ সংঘাতের পর বছর খানেক ধরে এই রাখাইনের প্রায় পুরোটার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। ফলে বাংলাদেশ সীমান্তে নেই রাষ্ট্রীয় দেশটির রাষ্ট্রীয় সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ।
সীমান্তের ওপাশে রাখাইনে এখনও অবশ্য চলে সংঘাত-আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। দেশটির অভ্যন্তরের এসব যুদ্ধে ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকেও। অনেক সময় গুলিও এসে পড়ে বাংলাদেশিদের বাড়িঘরে।
সীমান্তে একটু পরপর আরাকান আর্মির ক্যাম্প। তাদের ব্যাপারে সতর্ক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে আরাকান আর্মির সদস্যরা ভীষণ রকম বেপরোয়া আর উগ্র হওয়ায় তারা কোনও গুলি ছুঁড়লেও দ্বিপাক্ষিক চ্যানেলে তা নিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই বাংলাদেশের।
বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম খায়রুল আলম বলেছেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট জটিল। বর্তমানে যেহেতু একটা নন স্টেট অ্যাক্টর কাজ করছে এখানে অবশ্যই একটা সমন্বিত এফোর্ট দরকার। সেটা সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে যারা গ্রাউন্ড লেভেলে কাজ করছে বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ সবার একটা সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার।
রোহিঙ্গা সংকট আর ভূ-রাজনীতির নানা জটিল সমীকরণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের গুরুত্ব অনেক। তাই কৌশলগত এই অঞ্চল নিয়ে সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন অনেকেই।
/এমএন

