Site icon Jamuna Television

সেদিন যাত্রাবাড়িতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয় সাংবাদিক মেহেদি, পরিচয়পত্র দেখেও থামেনি বর্ষণ

রইসুল ইসলাম ইমন:

হাসান মেহেদী, বয়স মাত্র ৩২ বছর। ছিলেন একজন দায়িত্বশীল তরুণ সাংবাদিক। পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের সন্তান তিনি। কর্মসূত্রে স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি এবং দুই শিশু কন্যা তিন বছর বয়সী মায়মুনা বিনতে নিশা ও দশ মাসের মেহেরাশকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে।

কাজ করতেন অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা টাইমস- এর সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে। এর আগে কাজ করেছেন দেশের একাধিক খ্যাতনামা গণমাধ্যমে। সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত ও দায়িত্ববান।

গত বছরের ১৮ জুলাই আজকের এই দিনে যখন সারাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল চরমে, তখন সাংবাদিক হাসান মেহেদী ছুটে বেড়াচ্ছিলেন খবর সংগ্রহে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। উত্তাল হয়ে উঠেছিল যাত্রাবাড়ী উড়াল সেতু। সেখানে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ শুরু করে পুলিশ৷

হাসান মেহেদীর হাতে ছিল ক্যামেরা, কাঁধে ব্যাগ, গলায় ঝুলছিল পরিচয়পত্র, চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ।

হঠাৎই পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে ছোড়া হয় গুলি। দৌড়ে উড়াল সেতুতে ওঠে হাসান মেহেদী। ছবি তুলতে যাবেন কিন্তু হঠাৎ মেহেদীকে লক্ষ্য করে গুলি করে পুলিশ। শরীরে কয়েকটি ছররা গুলির আঘাত লাগলে, বারবার পরিচয়পত্র হাতে উঁচিয়ে দেখান তিনি। কিন্তু থামেনি গুলিবর্ষণ। বুক ঝাঁঝরা করে দেয় শতশত ছররা গুলি। ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন সাংবাদিক হাসান মেহেদী।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানে থাকা সহকর্মী তাকে চিনতে পারেন। পরিবারকেও জানান। কিন্তু ইতোমধ্যে তিনি মৃত জানিয়ে দেয় চিকিৎসক। এক নির্মম দৃশ্য, যেখানে সংবাদ সংগ্রহ করার দায়ে প্রাণ দিতে হয়।

একজন মানুষকে মারতে কয়টা গুলি লাগে— এই প্রশ্নটি বারবার করে তোলেন হাসান মেহেদীর শোকস্তব্ধ বাবা মোশাররফ হোসেন ও মা মাহমুদা বেগম। স্ত্রী পপি আজও বিশ্বাস করতে পারেন না একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, পরিচয়পত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও একজন সাংবাদিককে এভাবে হত্যা করা সম্ভব। মায়মুনা ও মেহেরাশ জানে নাই না তাদের বাবা কেনো আর ফিরে আসবে না।

ঘটনার পরে, ২৭ জুলাই ২০২৪, পুলিশ একটি মামলা দায়ের করলেও অভিযুক্ত করা হয় জামায়াত ও বিএনপি সংশ্লিষ্ট নেতাদের। পরে এক নারী ফুফু পরিচয়ে মামলা করে যা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের আশায়। দীর্ঘদিন বাদে, সরকার পরিবর্তনের পর হাসান মেহেদীর বাবা নিজেই মামলা করতে গেলে, আগের দুটি মামলার কারণে তা গ্রহণ করা হয়নি।

পরে ডিবির তৎকালীন ডিসির সহযোগিতায় পুরোনো মামলা বাতিল করে, নতুন মামলা নেয় যাত্রাবাড়ী থানা। কিন্তু এখানেও বাধা, প্রথম এজাহারে থাকা ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম বাদ দিতে হয়। মামলার অগ্রগতি আজও বেশিদূরে আগায়নি। শুধুমাত্র সঠিক বিচারটুকুই চায় পরিবার।

/এটিএম

Exit mobile version