
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহত ও নিখোঁজদের তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা আশা করে স্কুলটির একজন শিক্ষিকার পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওই শিক্ষিকা পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনের একজন শিক্ষিকা। আপনাদেরকে দুইহাত জোর করে বলছি ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম আমার চেয়ে বেশি আপনারা ফেসবুকবাসী জানবেন না তাইনা?’

পোস্টে বলা হয়, ‘স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১ টায়, আমি ঠিক তার এক থেকে দুই মিনিট পূর্বে স্কাই সেকশনে ঢুকে দেখি ওখানে শুধু একটা বাচ্চা দাঁড়ানো। কেউ ছিলোনা সবাই চলে গিয়েছিল। আপনারা জানেন না ছুটির সময় হলে বাচ্চারা তিন চার মিনিট আগে থেকেই কীভাবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য এবং আমি চলে আসার পর অভিভাবক আসেনি বলে আবার স্কাই এ কিছু বাচ্চা ঢুকেছিলো তাদেরকেও আমাদের আরেকজন টিচার ক্লাস থেকে নিয়ে অন্য সেকশনে বসায়।’
এরপরেও আবার কয়েকজন (৩-৪) জন ঢুকেছিলো তাদেরকেই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কিংবা যারা করিডোরে খেলছিলো বা সিঁড়িঘরে ছোটাছুটি করছিলো। কিংবা ওই মুহুর্তে ওই জায়গায় কাকতালীয় ভাবে ছিলো।
এরপর আসেন ক্লাউড-এ ওখানে বাচ্চার সংখ্যা স্কাই-এর চেয়ে বেশি ছিলো। আমার ধারনা মাহরিন মিস, মাসুকা মিস ও মাহ্ফুজা মিস ওখান থেকেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করছিলো এবং তাদের বের করতে করতে নিজেরা ঝলসে যায়। যারমধ্যে মাহরিন মিস এবং মাসুকা মিসকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। অন্যদিকে, মাহফুজা মিসের অবস্থা এখন গুরুতর উনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। উনার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
ক্লাউডের পাশের রুম ময়না যেখানে কিছু বাচ্চা ইনজিউরড্ কেউ মারা যায়নি। ময়নার পাশে দোয়েল— ওই ক্লাসের একটা বাচ্চা আর নেই। দোয়েলের পাশে টিউবাররোজ এবং ওয়াটারলিলি—সেখানেও সবাই সেফ আছে।
দ্বিতীয় তলার বাচ্চারদের ও ঘটনা একই। দুইটা ক্লাসরুম একটা টিচার্স রুম পুড়েছে। ওখানেও ১০-২০ জন ছিলো।
হায়দার আলী ভবনের মুখে, দোলনায় এবং করিডোরের হাঁটাহাঁটি করা বাচ্চাদের সংখ্যা এভাবে বলতে পারা যায় না।অনুমান ও করা কঠিন।তারমধ্যে অনেকের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে যে লাশগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এরমধ্যে আছে ওখানকার কর্মরত আয়া ও স্টাফরা।
তাই ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আপনারা যত মৃতের সংখ্যা বলছেন সেটা একেবারে সম্ভব না। তারমধ্য আমরা যারা দুই কর্নারে ছিলাম তারা তো অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসছি।
আর লাশ গুম করার কথা যারা বললেন, আপনাদের কতখানি মাথায় সমস্যা আমার জানা নেই। কারন একটা বাচ্চা যাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি তার লাশটাতো অন্তত আমরা তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছানোর সর্বাত্মক চেষ্টাটা করবো। তাইনা? আমরা টিচার, রাজনীতিবিদ নই।
আপনাদের কোনো ধারণা নেই এই শিক্ষক শিক্ষিকাগুলো কিভাবে বাচ্চাদেরকে সারাদিন আগলে রাখে। ছুটি হওয়ার সময় মাহরিন মিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে প্রতদিন বাচ্চাদেরকে অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দেয়। যতক্ষণ একটা বাচ্চারও অভিভাবক থাকে উনি গেট থেকে নড়েন না। তাই হাত জোর করে বলছি।ভুল তথ্য ছড়াবেন না।মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না।
নিহতের সংখ্যা সামনে বাড়বে আপনাদের বাড়াতে হবেনা, আসেন আমরা প্রার্থনা করি প্রতিটা ফুলের জন্য যারা অকালে ঝড়ে গেলো। আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকা স্টাফ আর ছোট ছোট বাচ্চা গুলোর জন্য আসেন আজ প্রার্থনা করি।
/এআই



Leave a reply