এক বছরের বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল ছিল ডলারের বাজার। লেনদেন হয়েছে ১২১ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারভিত্তিক করা হয় ডলারের দাম।
এরপর কিছুটা বাড়তে থাকে বিনিময় মূল্য। লেনদেন হয় সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৯৫ পয়সায়। তবে জুনের মাঝামাঝি থেকেই কমতে থাকে দাম। ১৪ জুলাই দাম কমে দাঁড়ায় ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায়।
মূলত রফতানি ও রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে যোগান বাড়ে ডলারের। এর সাথে যোগ হয় ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারে। কমে আসে বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতিও। যার প্রভাব পড়ে বিনিময় মূল্যে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রফতানি বেড়েছে, অন্যদিকে আমদানির কিন্তু চাপ কমে গেছে। ক্যাপিটাল আমদানি প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। হুন্ডির একটা চাহিদা ছিল, মানে বৈদেশিক মুদ্রার একটা ডিমান্ড ছিল বাইরে, সেটা কিন্তু এখন আর নেই। পেমেন্টের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার যে চাপ তা অনেকটাই বলতে গেলে নাই। তাই বাজার এখন স্থিতিশীল। বাজারে তারল্য আসায় দাম পড়ে গেছে।
এদিকে, ডলারের দরপতন ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকও উদ্যোগ নেয়। টেন্ডারের মাধ্যমে দুই দফায় কেনা হয় ৪৮ কোটি ডলার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ উদ্যোগের পর ১২১ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় স্থির হয়েছে ডলারের দাম।
আইএমএফ এর শর্ত মেনেই বাজারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন।
তিনি বলেছেন, রফতানিকারকদের স্বার্থ বিবেচনায় এবং রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের উৎসাহ অব্যাহত রাখার স্বার্থে ডলারের অবমূল্যায়ন যাতে আর না হয় সেই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করেছে। যা দামের মাধ্যমে নয়, বাজার থেকে ডলার ক্রয়ের মাধ্যমে। এই ক্রয় প্রক্রিয়াটা ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরাও। তারা বলছেন, ডলারের দরপতন বেশি হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রফতানি শিল্প। প্রবাসীদের মাঝে বাড়তে পারে হুন্ডির প্রবণতা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বললেন, অর্থনীতির তো একটা বিরাট অংশ হচ্ছে পোশাক শিল্প। এখন যদি এক্সচেঞ্জের দিকে এপ্রিশিয়েট করা হয় তাহলে আল্টিমেটলি রিয়েল টার্মসে তো গার্মেন্টসের লোকেরা কম পাবে। বাজার থেকে ক্রয় করতেছে। তখন তো রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রফতানিকারকার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তো আবার ব্যালেন্সে বাজে প্রভাব আসবে। সেজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক এটা করতেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ভুল সিন্ধান্ত নেয়নি, এটা ঠিকই আছে।
এদিকে, খোলা বাজারে এখন প্রতি ডলার লেনদেন হচ্ছে ১২৪ থেকে ১২৪ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে।
/এমএন

