আহমেদ রেজা:
ঠিক এক বছর আগে, রাজনৈতিক দোষারোপ তখন চরমে। অন্যদিকে, কড়া কারফিউ ধীরে ধীরে শিথিল হতে শুরু করলে স্বস্তি ফেরে জনজীবনে। এদিকে, স্বল্প পরিসরে ইন্টারনেট চালু হলেও সীমাবদ্ধ ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার। সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন বিদেশি কূটনীতিকদের দেখাতে বিশেষ পরিদর্শন কর্মসূচির পরিকল্পনা করে শেখ হাসিনা সরকার। সারাদেশে সেনা মোতায়েন হয় জোরদার। অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশেষ বাহিনীর নজরদারিতে।
সকাল ১০টায় কিছু সময়ের জন্য শিথিল হয় কারফিউ। কিন্তু রাজধানীর জুড়ে পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল না কিছুই। ২২ জুলাই ২০২৪ সীমিত পরিসরে চালু হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে ছিলো সীমাবদ্ধতা।
এই দিনেই ঢাকায় নিযুক্ত ৪৯ দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে ঘুরে দেখানো হয় মিরপুর মেট্রোরেল, বিটিভি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন স্থাপনার ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন— বিশ্ব দেখেছে, কারা সহ্য করতে পারে না দেশের অর্জন।
দেশের ইস্যু নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহ ও প্রচারের ক্ষেত্রে নেয়া হয় বিশেষ সতর্কতা। খোদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এডিটরস গিল্ডের সাথে বৈঠক কোরে এ সম্পর্কিত নির্দেশনা জারি করেন।
এদিন সরকার জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভের দায়ে শাস্তি পাওয়া ৫৭ বাংলাদেশি প্রবাসীর বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। উল্টো প্রবাসী কল্যান প্রতিমন্ত্রী, এই ঘটনার দায় চাপান বিএনপি-জামায়াতের ওপর।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশে যে অগ্নি সন্ত্রাস ও ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান হুশিয়ারি দেন, সরকারি সম্পদ ধ্বংস ও হত্যার সাথে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
সবকিছু থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে বিএনপিকে দোষারোপ করছে সরকার। এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান আশা করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড জড়িতদের শনাক্তে তৎপরতা চলছে বলে জানান সাবেক ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়করা তখন আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারিতে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের ফোন নিয়ে নেয়া হয়। এছাড়াও ইন্টারনেট থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। নাহিদের ওপর হামলার পরদিনই নাহিদের বাবা ও সারজিসকে সাথে নিয়ে সিআইডি অফিসে যাই।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমাদেরকে নজরদারি করা থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখা, মোট কথা বিগত সরকার সবকিছু চেষ্টা করেছে। আমাদের মাথায় একটি বিষয়ই ঘুরছিলো যে পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা যায়। সেই সাথে, এই ফাঁদ থেকে বের হওয়া এবং আমাদের আন্দোলন চলমান রাখা।
জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে টহল জোরদার করে বর্ডার গার্ড বাহিনী। প্রস্তুত ছিলো বিজিবির ডগ স্কোয়াডও। তল্লাশীও অব্যাহত রাখে বিজিবি সদস্যরা।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টহলে চলছিল দেশজুড়ে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লায় ফাঁকা রাস্তায় ছিল টহল ও চেকপোস্ট। জরুরি সেবায় কেবলমাত্র চালু ছিল কিছু পরিবহন।
/এআই

