১২ বিষয়ে ঐকমত্য, তবুও প্রশ্নের মুখে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের পদক্ষেপ

|

দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক। ফাইল ছবি।

রাসেল আহমেদ:

জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের আকাঙ্খা ছিল জনমনে। দেয়ালে দেয়ালে যার জানান দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। দাবি ওঠে স্বৈরশাসক হয়ে উঠার পথ বন্ধ করার।

অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সংবিধান, নির্বাচন ও বিচার বিভাগসহ প্রথমে ছয়টি কমিশন করে। পরে স্বাস্থ্য, পুলিশ সংস্কারসহ আরও পাঁচটি কমিশন গঠিত হয়। তারপর শুরু হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক আলোচনা। দীর্ঘ বৈঠকে ১২টি মৌলিক বিষয় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। যার মধ্যে রয়েছে একজন সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।

তবে ঐকমত্য হয়নি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে সবাই একমত হলেও পিআর প্রশ্নে দ্বিমত রয়ে গেছে। ঐক্য হয়নি সাংবিধানিক পদের নিয়োগ প্রসঙ্গেও। এর বাইরে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, পুলিশ সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি।

এদিকে, ১২টি মৌলিক বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য এলেও ফ্যাসিবাদ ঠেকানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়, বলছেন বিশ্লেষকরা।

তার ওপর স্থানীয় সরকার এবং পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কারে নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকার অনেকটাই ব্যর্থ, এমনটা মনে করেন কেউ কেউ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, কর্তৃত্ববাদ যেন ফিরে না আসে, সংস্কারের মূল টার্গেটটা তো সেই জায়গাতেই হওয়া। সেই সংস্কার হলো না। ঘুরে-ফিরে পূর্বের মতোই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলো। তাহলে তো আমি মনে করি যে সংস্কারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এক-তৃতীয়াংশ বিষয়ে একমত না। তাহলে এটা কি এ রকম একমত-দ্বিমত করতে করতে সময়টা শেষ হয়ে যাবে। একমাত্র রাজনীতিবিদরাই কথা বলবেন। রাজনৈতিক দল কথা বলবে, তাদের কথাতেই সবকিছু হবে, এটা তো ঠিক না। এখানে তো জনগণেরও মতামত আছে। আর এই জনগণের মতামত, দলগুলোর মতামত; সরকারকেও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার সে কাজটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ঐকমত্যে পৌঁছানো বিষয়ের বাস্তবায়ন নিয়েও সংশয় কাটেনি। পরবর্তী সংসদ নাকি গণপরিষদে সংবিধানের সংস্কার হবে তা নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য রয়েই গেছে।

অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এই সরকার তো সংবিধান দিয়ে হয় নাই। এই সরকারটা স্মুথলি চলছে না? সবাই সমর্থন করেছে না? কারণ, ওই সময়ে এটার কোনও বিকল্প নাই। গণপরিষদ দরকার হলে আলাদা গণপরিষদ করবেন। আবার কি পার্লামেন্ট করবেন? একসাথে দুইটাই হয়ে যেতে পারে। আরেকটা প্রসেস হচ্ছে যে আপনি কোনও কিছুই করবেন না এখন। যে নির্বাচিত হবে তাদের ওপর ছেড়ে দেবেন।

অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, একটি দল যদি দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে সংসদে যায় তাহলে এটা বাস্তবায়ন করতে তারা দেরি করবে অথবা ওটাকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। গণপরিষদ তো দলীয় ভিত্তিতে করতে হবে। তাহলে তো ওইখানে যখন দলীয় ভিত্তিতে গণপরিষদে যায় সেগুলো তো একই সমস্যা হবে তাই না? পরিস্থিতিটাকে জটিলতার দিকে ইচ্ছা করে নিয়ে যাওয়া আরকি, আমি তা মনে করি।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনতে পারেনি। স্বার্থের বেড়াজাল ছিন্ন করতে পারেনি নেতারা। ফলে ৯০-এর তিন দলীয় রূপরেখার মতো এবারও রাষ্ট্র সংস্কারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা কাটেনি।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply