Site icon Jamuna Television

১৮ বছর ধরে শিকলবন্দি সাতক্ষীরার হোসেন আলী

সাতক্ষীরা করেসপনডেন্ট:

জন্ম থেকে বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হোসেন আলী সরদার (২৫)। অন্যত্র চলে যাওয়ার ভয়ে মা-বাবা তাকে শিকলবন্দি করে রেখেছেন। ঘটনাটি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শুকদেরপুর গ্রামের দিনমজুর মালেক সরদারের বড় ছেলে। এভাবেই ১৮ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হোসেন আলীকে বাড়ির পেছনে রাস্তার ধারে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। তার আকুতি দেখে অনেকেই তাকে খাবার কিনে দেন। ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও বাবা-মায়ের কাছে সে চোখের মণি।

স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক এস. এম. কলিম উদ্দীন জানান, অনেক কষ্ট করে জীবন পার করছে হোসেন আলী। তার শিকলবন্দি জীবন দেখে প্রতিবেশীসহ সবার খারাপ লাগে। তবে কিছু করার নেই, কারণ তাকে ছেড়ে দিলে দূরে চলে যায়। অনেক দিন তার কোনো খোঁজ থাকে না।

হোসেন আলীর বাবা মালেক সরদার বলেন, ছোটবেলায় অন্য শিশুদের থেকে ভিন্ন আচরণ করতো হোসেন আলী। সে কথা বলতে পারতো না। একপর্যায়ে তাকে বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজ দেখানোর পরে জানতে পারি সে প্রতিবন্ধী। ছোটবেলায় তাকে ছেড়ে রাখলে সে বিভিন্ন স্থানে চলে যেতো। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে তাকে শিকলবন্দি করে রাখতে হয়।

তিনি আরও বলেন, একটি প্রতিবন্ধী কার্ড ছাড়া তার কিছুই নেই। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকলেও হোসেন আলী বঞ্চিত।

হোসেন আলীর মা আছিয়া বেগম বলেন, তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে হোসেন আলী বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। সকালে ঘর থেকে বের করে বাড়ির পেছনে রাস্তার ধারে শিকলবন্দি করে রাখা হয। সন্ধ্যায় গোসল করিয়ে ভাত খাওয়ানোর পর ঘরের মধ্যে আনা হয়। এভাবেই দৈনন্দিন কাজ কেটে যায়। অনেক চিকিৎসক দেখানোর পরও তাকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, হোসেন আলীকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সুনজর দিলে হোসেন আলীর পরিবার আরও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেত।

তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সরদার জানান, ছেলেটা মানসিক প্রতিবন্ধী। পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। তবে বয়স বেড়ে যাওয়ায় সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

/এসআইএন

Exit mobile version