আলমগীর হোসেন:
ৱবাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে এপ্রিলের শুরুতে বিভিন্ন দেশের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশেও আরোপ করা হয় ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক। বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
এর পরপরই শুল্ক কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয় সরকারও। চালিয়ে যেতে থাকে আলোচনা। প্রথমে ২ শতাংশ কমানো হলেও দ্বিতীয় দফায় আরও ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
আর যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি নিয়ে উদ্বেগও খানিকটা কমেছে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তারা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রফতানির ক্ষেত্রে যে বড় উল্লম্ফন দেখেছিলাম সেখান থেকে যে কমে ২০ শতাংশে আসলো এবং প্রতিযোগী অন্যান্য দেশগুলোর সমকক্ষ হলো এটি আমাদের উদ্বেগ অনেকাংশে কমিয়েছে।
এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেছেন, আমরা একটা ভয়ে ছিলাম, যেটা বারবার আমরা বলছিলাম যে, আমাদের যেসব দেশের সাথে প্রতিযোগিতা, তাদের থেকে আমাদেরটা বেশি হয়ে যায় কি না? যেহেতু তাদের থেকে বেশি হয় নাই, তাদের সমানই রাখা গেছে, ফলে এই জায়গাটাতে আমরা একটা বড় চিন্তামুক্ত হয়েছি আপাতত।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কম দামের পণ্য উৎপাদন করায় বর্ধিত শুল্কে ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনের তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। সামনের দিনে এসব দেশের রফতানি আদেশ বাংলাদেশে আসতে পারে।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সামগ্রিক শুল্ক বিবেচনা করলে আমরা মোটামুটি তুলনীয় দেশগুলোর সাপেক্ষে একটি ইতিবাচক জায়গায় রয়েছি এবং চীনের সাথে যদি উচ্চশুল্ক অব্যাহত থাকে অর্ডারগুলো অন্যান্য দেশে রিলোকেট করবেন। সুতরাং সেই ধরনের বাড়তি একটি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ সামনে বাংলাদেশের আসতে পারে।
ফজলে শামীম এহসান বললেন, আগামী সিজনে আমরা আশা করতেছি অন্যান্য দেশ থেকে বিশেষ করে ভিয়েতনাম, চীন থেকে আমাদের এখানে প্রচুর পরিমাণে অর্ডার শিফট করবে। সেই অর্ডারগুলো পাওয়ার পরে আমরা আবার তখন দামটা বাজার দর অনুযায়ী নিতে পারবো। কিন্তু এখন অর্ডার কম থাকার কারণে আমাদের যে একটা প্রাইস প্রেশার আসবে বা কিছু ফ্যাক্টরিতে কাজ থাকবে না সেটাকে একটু আমাদের খুব টেকনিক্যালি এবং এক হয়ে ওভারকাম করে আসতে হবে।
পোশাক শিল্পের বেশিরভাগ কাঁচামাল আসে চীন থেকে। ট্রান্সশিপমেন্ট ট্যারিফের কারণে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছুটা চাপে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তৃতীয় কোনও দেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে আবার মার্কিন বাজারে রফতানি করলে সেখানে বাড়তি ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। চীন থেকে যে কাঁচামাল আমদানি করে থাকে সেটি ব্যবহার করেই মার্কিন বাজারে আমরা রফতানি করে থাকি। সুতরাং এই কাঁচামালের ওপরে নতুন করে এই ট্রান্সক্রিপমেন্ট ট্যারিফ কতটুকু ইম্পোজ হবে এবং তার মাধ্যমে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কতটুকু চাপ পড়বে সেটি কিন্তু আমাদের বিচার্য বিষয়।
ফজলে শামীম এহসান বলেছেন, এটা যদি থাকে যে আমাদের ভ্যালিডেশন ৪০ শতাংশ করতে হয় এবং নূন্যতম ৫ শতাংশ লাভ দেখায়, ৪৫ শতাংশ ভ্যালিডেশন যদি করতে হয় তো ৫৫ শতাংশ আমরা আমদানি করতে পারবো। তো এইটা আমাদের একটা বড় চ্যালেঞ্জিং জায়গা হবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে, যারা আমরা নিটওয়্যারে ম্যানমেড ফাইভারে কাজ করি।
একক দেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে রফতানি পণ্যে ও বাজারে বৈচিত্র আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
/এমএন

