Site icon Jamuna Television

২ আগস্ট ২০২৪: শিক্ষার্থীদের রক্ষায় মাঠে নেমেছিল দেশের সব শ্রেণির মানুষ

চব্বিশের ২ আগস্ট বা ৩৩ জুলাই। ততদিনে ধৈর্য হারিয়েছে গোটা জাতি। আন্দোলন এখন আর শুধু শিক্ষার্থীদের নয়। শেখ হাসিনার গড়া রাষ্ট্রীয় বাহিনী থেকে সন্তানতুল্যদের রক্ষায় মাঠে নেমেছেন অভিভাবক, শিক্ষক, শিল্পীসমাজসহ দেশের সব শ্রেণির মানুষ। গোটা দেশে তখন যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি। যেখানে দেশের আগামী ভবিষ্যতের দিকে বন্দুক তাক করে আছে জাতির নিরাপত্তায় থাকা রাষ্ট্রীয় বাহিনী।

একদিন আগে ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়া হয় ৬ সমন্বয়ককে। মুক্তি পেয়েই স্পষ্ট বার্তা, আন্দোলন চলবে। জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি পড়ানোর বিষয়টিও এদিন নিশ্চিত করেন এই সমন্বয়করা। তবে দীর্ঘক্ষণ ডিবি হেফাজতে থাকা এই সমন্বয়কদের এখন কতটা বিশ্বাস করা যায়, তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন কোনো কোনো সমন্বয়ক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক রিফাত বলেন, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদরা যখন মুক্তি পায় তখন অনেকে বলেছিল, ওদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে। এমনকি এমন কথা ছড়িয়ে পড়ে যে তাদের শরীরে চিপ দিয়ে দিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে। তবে সমন্বয়করা মুক্তি পাবার পর এসে তারা নিজেরাই জানিয়েছিল, যারা তাদের অনুপস্থিতিতে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তারা যেন সেই বিষয়টা জারি রাখে। এর মধ্যে, নাহিদ-আসিফরা নিজেদের অবস্থান থেকে আনুসঙ্গিক কিছু বিষয় ছাত্র-জনতার কাছে পরিস্কার করতে চায় বলেও জানায় রিফাত।

আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে দ্বিগুণ সাহসে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মূলস্রোতে ততোদিনে গতি এনেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকল বন্দিকে মুক্তি আর হত্যার বিচার চেয়ে সকালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে শুরু হয় গণমিছিল। বৃষ্টিতে ভিজেই তাদের সাথে গলা মেলার অভিভাবক-শিক্ষকরা। প্রগতি সরণিতে ধ্বনিত হয় ব্র্যাক ও ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগুনঝরা স্লোগান। বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও প্রতিবাদ-সমাবেশ করেন মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা। বায়তুল মোকাররম থেকেও বের হয় গণমিছিল। সবার দাবি, হত্যার বিচার আর ৯ দফার বাস্তবায়ন।

এদিকে, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর তখন রণক্ষেত্র। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মাঠে নামা আন্দোলনকারীদের ওপর চলে ছাত্রলীগ আর পুলিশের দ্বিমুখী হামলা। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড আর টিয়ারশেলের মাঝেই চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

ততোদিনে ধৈর্য হারিয়েছেন শিল্পীরাও। ২ আগস্টও বেলা ১১টা থেকে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে প্রতিবাদ-সমাবেশ করেন শিল্পী সমাজ। গান-কবিতা আর পথনাটকের মাধ্যমে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদ জানান তারা। অন্যদিকে, বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে দ্রোহযাত্রার ডাক দেন শিল্পী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের আরেকটিঅংশ। শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয় সেই দ্রোহযাত্রা। যেখানে অংশ নেন অজস্র সাধারণ মানুষ। মিছিলটির যাত্রাপথে হাততালি দিয়েও সমর্থন জানান পথচারীরা।

উল্লেখ্য, সারাদেশেও এদিন ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফেনী, খুলনা, চট্টগ্রাম সিলেটসহ দেশের প্রতিটি প্রান্তে যেন একরকম যুদ্ধ পরিস্থিতি। যার একপাশে ভারী অস্ত্রে সুসজ্জিত ও প্রশিক্ষিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী, অন্যদিকে নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্ররা দাঁড়িয়ে একবুক সাহস নিয়ে।

/এমএইচআর

Exit mobile version