Site icon Jamuna Television

আজকের দিনটা বাঁহাতিদের— জানুন তারা কেন এত ব্যতিক্রম

কর্মক্ষেত্রে কিংবা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন বাঁহাতিরা। কারণ, বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম বা নকশা ডানহাতিদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়। এর অবশ্য কারণও আছে— গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ মানুষ বাঁহাতি।

তবুও নানা প্রতিবন্ধকতা ও কুসংস্কার কাটিয়ে উঠে এই অল্প সংখ্যক মানুষ পৃথিবীতে নিজেদের ছাপ রেখেছেন। যা শুনলে আপনি চমকে উঠতে পারেন একইসঙ্গে জানতে পারবেন কেন তারা ডানহাতিদের থেকে ব্যতিক্রম।

আর কেনই বা এত আলোচনা? কারণ আজ আন্তর্জাতিক বাঁহাতি দিবস। ১৯৭৬ সালে ডি. আর. ক্যাম্পবেল নামের এক ব্যক্তি ‘লেফট হ্যান্ডার্স ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯২ সালে সংগঠনটির উদ্যোগে দিনটি বড় পরিসরে উদযাপন শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বাঁহাতি জনপ্রিয় তারকা

গায়ক জাস্টিন বিবার বাঁহাতি। তিনি প্রথমে একটি ডানহাতিদের গিটার হাতে নেন এবং সেটি উল্টোভাবে বাজানোর চেষ্টা করেন, যার ফলে বেশ বেগ পেতে হয়। জনপ্রিয় গায়িকা ডলি পার্টনও গিটার একইভাবে বাজাতেন। পরে জাস্টিনের মা তাকে একটি বাঁহাতিদের গিটার কিনে দেন এবং সেটি দিয়েই সে গিটার বাজানো শেখে।

বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, বিশ্বের ধনীদের তালিকায় শীর্ষে থাকা বিল গেটস, টেনিস তারকা রাফায়েল নাদাল, ফুটবল বিস্ময় ডিয়েগো ম্যারাডোনা, কিংবদন্তি লিওনেল মেসি, ক্রিকেটার ব্রায়ান লারা, ওয়াসিম আকরাম, যুবরাজ সিং ও সাকিব আল হাসানের মতো তারকারা সবাই বাঁহাতি।

গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার পল ম্যাককার্টনি ও লেডি গাগা। রুপালি পর্দার তারকাদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, টম ক্রুজ, অমিতাভ বচ্চন, এবং জনপ্রিয় উপস্থাপিকা ওপ্রাহ উইনফ্রে।

বাঁহাতি নেতারা

যদিও বিশ্বের জনসংখ্যার একটি ছোট অংশ বাঁহাতি, তবুও অনেক বাঁহাতি মানুষ পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা বাঁহাতি। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এবং রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স উইলিয়ামও বাঁহাতি।

এমনকি উইলিয়ামের প্রপিতামহ রাজা জর্জ ষষ্ঠ স্বাভাবিকভাবে বাঁহাতি ছিলেন, কিন্তু তার বাবা জর্জ পঞ্চম তাকে জোর করে ডান হাতে লিখতে বাধ্য করেন।

যেভাবে ডানহাতি হতে বাধ্য করা হয়:

শিশুদের বাঁহাতির লক্ষণ দেখা দিলে অনেক সময় তাদের জোর করে ডানহাতি বানানোর চেষ্টা করা হয়। ইতিহাসে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে বাঁহাতিদের ডান হাতে কাজ করতে শেখানো হতো। এমনকি আজও কিছু দেশে এই প্রবণতা দেখা যায়।

এই কারণে অনেকেই দুই হাতে সমানভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়ে উঠেছেন, যাদের বলা হয় অ্যাম্বিডেক্সট্রাস—অর্থাৎ যারা ডান ও বাঁ দুই হাতেই দক্ষ।

বাঁ হাতকে অশুচি মনে করার সংস্কৃতি:

বিশ্বের কিছু দেশে বাঁ হাতকে এখনও ‘অশুচি’ বা ‘অনুপযুক্ত’ মনে করা হয়। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক অঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবে বাঁ হাতে খাওয়া, কিছু তোলা বা কাউকে কিছু দেয়া অশোভন আচরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ভাষায় বাঁহাতিদের নেতিবাচক উপস্থাপন:

ভাষাতেও বাঁহাতিদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব রয়েছে। ইংরেজি শব্দ রাইট’ অর্থ শুধু ডান না, বরং ‘সঠিক’। তেমনি ‘লেফট’ এসেছে অ্যাংলো-স্যাক্সন শব্দ ‘লিফট’ থেকে যার মানে ‘দুর্বল’। লাতিন শব্দ ‘সিনিস্টার’ অর্থ ‘বাঁ’। অথচ ইংরেজিতে অশুভ বা দুর্ভাগা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এই শব্দ।

মস্তিষ্কের বাঁ ও ডান পাশ: যেভাবে কাজ করে:

মানব মস্তিষ্ক ক্রস-ওয়ায়ারড—অর্থাৎ মস্তিষ্কের ডান দিক নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের বাঁ পাশ, আর বাঁ দিক নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের ডান পাশ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাঁহাতিদের মস্তিষ্কের দুই পাশের মধ্যে সংযোগ আরও ভালো, বিশেষ করে ভাষা ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত অংশে।

অধ্যাপক ক্রিস ম্যাকম্যানাস বলেন, যদি আপনি বাঁহাতি হন, তাহলে আপনার মস্তিষ্ক হয়তো একটু ভিন্নভাবে সংগঠিত। আর সেটাই আপনাকে এমন কিছু দক্ষতা দিতে পারে, যা অন্যদের নেই।

অনেকে মনে করেন, বাঁহাতিরা বেশি সৃজনশীল এবং শিল্প, সংগীত বা ডিজাইনে বেশি পারদর্শী। যদিও এই দাবির পক্ষে এখনো পর্যন্ত যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

বাঁহাতি হওয়া এত বিরল কেন?

বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিত নন কেন বাঁহাতি মানুষের সংখ্যা কম। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো ‘সামাজিক সহযোগিতা’। হাজার বছর ধরে মানুষ যখন একত্রে বসবাস ও কাজ করতে শুরু করে, তখন দেখা যায়—একই হাত ব্যবহার করলে যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম ভাগ করে কাজ করা সহজ হয়। এই কারণে ধীরে ধীরে ডানহাতি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, এবং বাঁহাতিরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।

সূত্র: ডেজ অব দ্য ইয়ার ও বিবিসি অবলম্বনে

/এসআইএন

Exit mobile version