নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং সাংবাদিক মিশুক মুনীরের আজ ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের এই দিনে মানিকগঞ্জের জোকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তারা।
‘কাগজের ফুল’ সিনেমার শুটিং লোকেশন দেখতে সহকর্মীদের নিয়ে মানিকগঞ্জে গিয়েছিলেন নির্মাতা-চিত্রগ্রাহক জুটি। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি। ঢাকা ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে মাইক্রোবাসে থাকা আরও তিনজন চলচ্চিত্রকর্মীর মৃত্যু হয়। ওই তিনজন হলেন গাড়ির চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল।
এ উপলক্ষ্যে এই দুই গুণীকে স্মরণ করবে ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ [ক্যাব] ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি (ডিইউএফএস)।
ক্যাবের উদ্যোগে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বীর উত্তম মীর শওকত সড়কের গ্রাউন্ড জিরোতে অনুষ্ঠিত হবে ‘চলচ্চিত্র পথ’ শিরোনামের বিশেষ আয়োজন।
অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হবে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে বানানো তারেক মাসুদের প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’, যার চিত্রগ্রহণ করেছেন মিশুক মুনীর। তারেক মাসুদকে নিয়ে নির্মিত প্রসূন রহমানের ‘ফেরা’ সিনেমাটিও দেখানো হবে।
তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করবেন প্রসূন রহমান, নাহিদ মাসুদ ও আসিফ মুনীর। এরপর দর্শকদের সঙ্গে হবে মুক্ত আলোচনা।
এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করবে। সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন সংসদের কর্মীরা।
১৯৫৬ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করা তারেক মাসুদের শিক্ষাজীবনের শুরুটা ছিল মাদ্রাসায়। পরে ঢাবি থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮৯ ‘আদম সুরত’ নির্মাণ করেন তারেক মাসুদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ১৯৯৫ সালে তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ ও ‘মুক্তির কথা’ (১৯৯৬) প্রশংসিত হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
২০০২ সালে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ নির্মাণ করেন। সিনেমাটির জন্য কানে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট লাভ করেন তারেক মাসুদ। তার নির্মাণে অন্যান্য সিনেমা ‘অন্তর্যাত্রা’ (২০০৬) ‘রানওয়ে’ (২০১০)।
এদিকে, ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি (ডিওপি) হিসেবে কাজ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছিলেন মিশুক মুনীর। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিওগ্রাহক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এছাড়া, সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন এটিএন নিউজের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর এই ছেলে।
তারেক মাসুদের সিনেমা ‘রানওয়ে’র প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন মিশুক। এছাড়া, ‘রিটার্ন টু কান্দাহার’, ‘ওয়ার্ডস অব ফ্রিডম’ প্রামাণ্যচিত্রগুলোতেও নিজের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, নিজ নিজ কর্মে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে (মরণোত্তর) একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।
/এএম

