Site icon Jamuna Television

আটলান্টায় ফোবানা সম্মেলন ঘিরে উৎসবের আমেজ

মুজিব মাসুদ, (আটলান্টা) যুক্তরাষ্ট্র থেকে:

৩৯তম ফোবানা সম্মেলনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। আগামী ২৯ থেকে ৩১ আগস্ট আটলান্টার ডুলুথে সুগারলোফ পার্কওয়ের গ্যাস সাউথ কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজক আটলান্টাভিত্তিক সাহিত্য-সংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলা ধারা’। নাচ, গান, আবৃত্তি, মঞ্চনাটক আর মহড়ায় মুখরিত হয়ে উঠেছে আয়োজনস্থল। দেশ-বিদেশ থেকে আগত শিল্পী ও অতিথিরা ইতোমধ্যেই আসতে শুরু করেছেন।

৩৯তম ফোবানা সম্মেলনকে ঘিরে আয়োজকদের চোখে এখন ঘুম নেই। দিন-রাত এক করে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এবারের সম্মেলনে প্রায় ৮ হাজার প্রবাসী বাঙালির মিলনমেলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আটলান্টায় যাচ্ছেন।

সম্মেলনস্থল ওয়েস্টিন হোটেলে বুকিংয়ের তোড়জোড় চলছে সমান তালে। ডুলুথ ও গ্যাস সাউথ কনভেনশন সেন্টার এলাকার আশপাশের বেশিরভাগ হোটেল ইতোমধ্যেই বুকিং শেষ হয়ে গেছে। ফলে এবারের ফোবানা আসর ঘিরে প্রবাসী বাঙালিরা এক অনন্য উৎসবের আবহে মেতে উঠেছেন।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার অংশগ্রহণকারী উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের স্থান আটলান্টার গ্যাস সাউথ কনভেনশন সেন্টার এবং সম্মেলনের অফিসিয়াল হোটেল আটলান্টার হোটেল ওয়েস্টিন।

এবারের সম্মেলনের মূল ফোকাস ‘প্রবাসী প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশ্বীকরণে বাংলাদেশের অবস্থান’। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়ানো, বাংলাদেশিদেরকে দেশটির মূলধারায় সম্পৃক্ত করা এবং শিক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। এবারের সম্মেলনে বেশ কিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এবারের ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবে আছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের মাসুদ রব চৌধুরী এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি হিসেবে আছেন নিউইয়র্কের আবীর আলমগীর। এছাড়াও আয়োজক কমিটির কনভেনর নাহিদুল খান সাহেল, মেম্বার সেক্রেটারি মাহবুব ভূঁইয়া, হোস্ট প্রেসিডেন্ট ডিউক খান, চিফ কো-অর্ডিনেটর দিলু মওলা এবং কো-কনভেনর কাজী নাহিদ সম্মেলন আয়োজনের মূল দায়িত্বগুলো পালন করছেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) চেয়ারপারসন মাসুদ রব চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়িয়ে তোলা, নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের জীবন, শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই এই সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে তিনি বলেন, ফোবানা সম্মেলনে থাকবে নানান বিষয়ভিত্তিক সেমিনার। এবারের সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ থেকে ২০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেওয়া হবে। প্রতিটি স্কলারশিপের মূল্যমান ১,০০০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও আটলান্টা সম্মেলনে আটলান্টার ১০ জন নতুন প্রজন্মের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন স্কলারশিপ প্রদান করবে ফোবানা।

ফোবানার এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর বলেন, এবারের সম্মেলনে উত্তর আমেরিকার ২৪টি শহর থেকে সর্বমোট ৭৪টি সংগঠন এবং সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, নানান আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য তিন দিনের ফোবানা সম্মেলনে থাকবে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরের সাংগঠনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিষয়ভিত্তিক সেমিনার, বইমেলা, সাহিত্য আসর, কাব্য জলসা, বিভিন্ন পণ্যের স্টল, ইয়ুথ ফোরাম, বিজনেস নেটওয়ার্কিং ইভেন্টস এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় তারকা শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীতানুষ্ঠান। তিনি আরও বলেন, সম্মেলনের শেষ দিন রোববার ফোবানার সাধারণ সভার পর ঘোষণা করা হবে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে আগামী বছরের জন্য নির্বাচিত নতুন কমিটির সদস্যদের নাম। তিনি আরও জানান, আগামী বছর ২০২৬ সালের ৪০তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে, যা ইতোমধ্যেই নির্ধারণ করা হয়েছে।

কনভেনর নাহিদুল খান সাহেল বলেন, সম্মেলনকে সফল করতে বাংলাদেশ থেকে অতিথি ও শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ফোবানা সম্মেলন মানে প্রবাসীদের একটি মিলনমেলা। বরাবরের মতো এবারও সম্মেলনে প্রবাস ও দেশের রাজনীতি, ট্রাম্প সরকারের নতুন প্রশাসন, বিভিন্ন স্টেটের গভর্নর, সিনেটর এবং বাংলাদেশের নতুন সরকারের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে পরিবেশ, বৈশ্বিক অর্থনীতি, বাংলাদেশের নদীর পানি সমস্যা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিষয়ে সেমিনার হবে। তিনি আরও বলেন, ফোবানা সম্মেলনে শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই নয়, মানবিক বিষয়েও কাজ করা হয়। করোনা সংকটের সময় ফোবানা প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ফ্রি করোনা টেস্ট করিয়েছে। তবে ফোবানা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ থাকে। প্রবাসে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দেওয়াও এই সম্মেলনের বড় অর্জন।

সম্মেলনের মেম্বার সেক্রেটারি মাহবুব ভূঁইয়া বলেন, এবারের সম্মেলনে বেশ কয়েকটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এবারের সেমিনারগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক ইস্যু: মানবাধিকার ও সামাজিক-রাজনৈতিক দিক। স্বাস্থ্য ও সুস্থতা: প্রতিরোধমূলক এবং চিকিৎসাগত দিক। প্রযুক্তি: প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। শিক্ষা, ক্যারিয়ার ও যোগাযোগে প্রযুক্তির প্রভাব। গঠিত পরিবেশ ও জলবায়ু: স্থাপত্য, পরিকল্পনা, শহরায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন। ব্যবসা ও অর্থনীতি: ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, উদ্যোক্তা, বাজার এবং অর্থনৈতিক নীতি। শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি: পাঠদান, সৃজনশীল শিল্প, ডিজাইন, চলচ্চিত্র, মিডিয়া এবং সাহিত্য। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: ঐতিহ্য সংরক্ষণ, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং বাংলাদেশি-আমেরিকানদের মূলধারায় সম্পৃক্ততা। এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের যুবক-যুবতী ও নারীদের বড় ধরনের অংশগ্রহণ থাকবে।

সম্মেলনের চিফ কো-অর্ডিনেটর দিলু মওলা বলেন, এবারের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো স্টেট থেকে অতিথিরা ইতোমধ্যেই নাম রেজিস্ট্রেশন শুরু করেছেন। জমকালো এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার আমন্ত্রিত অতিথি অংশগ্রহণ করবেন। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অতিথিদের জন্য হোটেল ওয়েস্টিন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আরও একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের অন্যতম বড় আকর্ষণ থাকবে বইমেলা। মেলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবি, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও থাকবে সাহিত্য আসর এবং কাব্য জলসা।

সম্মেলনের সিনিয়র কো-কনভেনর কাজী নাহিদ বলেন, সারাদিনের বিভিন্ন আয়োজনের পাশাপাশি বিকেল থেকেই মূল মঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এবার উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহরের ২৬টি সংগঠন পরিবেশন করবে তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুক্রবার সম্মেলন উদ্বোধনের দিন একশ জনেরও অধিক নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

তিনি আরও বলেন, উদ্বোধনের পরপরই হবে ব্যান্ড নাইট, যেখানে বর্তমানের ব্যান্ড সংগীতের পাশাপাশি আশি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় গান নিয়ে দর্শক মাতাবেন উইনিং ব্যান্ডের চন্দন, ফিডব্যাক ব্যান্ডের রোমেল খান এবং বিউটি দাস প্রজেক্ট ব্যান্ডের বিউটি দাস। শনিবার এবং রোববার সংগীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী সামিনা চৌধুরী, রিজিয়া পারভিন, শাহনাজ বেলী, দিলশাদ কণা, প্রতীক হাসান, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা কিশোর এবং জনপ্রিয় তারকা শিল্পী প্রীতম। এ ছাড়াও থাকবেন প্রজন্মের জনপ্রিয় বাংলাদেশি-আমেরিকান তারকা শিল্পী মোজা।

/এসআইএন

Exit mobile version