Site icon Jamuna Television

সম্পর্ক ঠিক রেখে কীভাবে ধারের টাকা ফেরত চাইবেন?

শরিফুল ইসলাম নাফি:

বিপদের সময়ে অনেকেই পরিচিতজনদের টাকা ধার দিয়ে সাহায্য করেন। তবে বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। না চাইলে এমন অনেকেই আছেন, ফেরত দিতে চান না। ধারগ্রহীতার কাছে বিষয়টি বেশ অস্বস্তিকর হলেও, অনেক সময় এমন আচরণ হতে পারে ভুলবশত।

আবার এমন অনেকেই আছেন, যারা হাতে টাকা আসার পর তা ফেরত দেবেন বলে চিন্তাভাবনা করেন। তবে অনেক সময় খুব সহজেই সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। এরফলে ধারগ্রহীতা মনে করেন, হয়তো ইচ্ছা করেই টাকা ফেরত দিচ্ছে না।

মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রের পাতায় খবর আসে—ধারের টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা। আপনি যদি শান্তিপ্রিয় মানুষ হন এবং এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে চান, তাহলে কি সমাধানের পথ খুঁজছেন? কীভাবে সম্পর্কও ঠিক থাকবে এবং একইসঙ্গে পাওনা টাকাও ফেরত আসবে?

আরও পড়ুন: বন্ধু টাকা ধার চাইছে, সম্পর্ক ঠিক রেখে যেভাবে ‘না’ বলবেন

তার আগে এমিলি পোস্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক পিটার পোস্ট টাকা ধার দেয়া নিয়ে কি মন্তব্য করেছেন, দেখে নেয়া যাক। তিনি বলেছেন, বন্ধুকে কখনোই টাকা ধার দেয়া উচিত নয়। তবে একবারে এমন কঠিন সিদ্ধান্তে না গিয়েও সহজ সমাধান খুঁজে নেয়া সম্ভব। সম্পর্ক ঠিক রেখে কীভাবে ধারের টাকা ফেরত আনার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:

সরাসরি কথা বলুন:

কাউকে ধারের টাকা ফেরত চাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিন—সরাসরি কথা বলায়; টেক্সট, ইমেইল বা ফোনে বিষয়টি শেয়ার করবেন না। এসব মাধ্যমে কথাবার্তা অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝির জন্ম দেয়। বরং বন্ধুকে কফি বা হালকা কিছু খেতে বসে সরাসরি কথা বলুন, যাতে পরিবেশটা স্বাভাবিক থাকে। এমনটাই বলেছেন ‘বি গুড: হাউ টু নেভিগিয়েট দ্য ইথিকস অব এভরিথিং’ বইয়ের লেখক র‌্যান্ডি কোহেন।

সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন:

এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—টাকা ফিরে পাওয়া নাকি বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখা। যদি সম্পর্কটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং আপনি আর্থিকভাবে সামলে নিতে পারেন, তাহলে হয়তো টাকা মাফ করে দেওয়াই আপনার জন্য ভালো হবে।

বেশ কিছু সেরা পদ্ধতিগুলো:

ইতিবাচক:
শুরুটা ইতিবাচকভাবে হোক। বলুন— তোমার প্রয়োজন ছিল বলে খুশি মনেই তোমাকে টাকা দিয়েছিলাম। এতে করে বন্ধুকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, সে যখন বিপদে ছিল, তখন আপনি তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

কোহেন বলছেন, এইভাবে বললে বোঝায় আপনার বন্ধুর পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন। হয়তো বন্ধুটি টাকা ফেরত দিতে না পেরে খারাপই বোধ করছে। এমন সহানুভূতিশীল ভাষা ব্যবহারে উত্তেজনাকর প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

সরাসরি বলা:

আপনি যার কাছে টাকা পাবেন তাকে সরাসরি বলুন। টাকা দেওয়ার বিষয়ে সে কী ভাবছে, কবে নাগাদ সেই টাকাটা দিতে পারবে। অনেক সময় আকার-ইঙ্গিতে বললে কাজ হয় না, বরং ভুল বুঝে এড়িয়ে যেতে পারে। সুতরাং ঠান্ডা মাথায় তাকে সরাসরি বলুন। এ বিষয়ে ফিলিপ গালানেস বলছেন, রাগ করবেন না। ঠান্ডা মাথায় বললে প্রতিক্রিয়া আরও ভালো হবে।

প্রয়োজনে একটু চাপ প্রয়োগ:

সামনে আপনার প্রয়োজনীয় কোনো কিছু কিনতে হবে অথবা জরুরি টাকার প্রয়োজন। এজন্য আপনার টাকা খুব প্রয়োজন। এতে করে তিনি তার ধারকৃত টাকা ফেরত দেয়ার প্রয়োজন বুঝবেন। আপনি যদি সত্যিই কোনো বিপদে থাকেন, তাহলে সেই কারণ উল্লেখ করলে বিষয়টি আরও জরুরি মনে হবে। তবে খেয়াল রাখুন, বিষয়টি অবশ্যই সত্য হতে হবে।

সময়সীমা নির্ধারণ:

প্রয়োজনে তাকে বলুন— আমি চাই এই মাসটি শেষ হওয়ার আগে টাকাটা ফেরত দিতে হবে। এতে করে বিষয়টি সে ভুলে গেলেও আবারও মনে পড়বে। আবার সময়সীমা ঠিক না করলে অনেকদিন ঝুলে থাকবে। এ ছাড়াও নতুন করে সময় আর বাড়াতে পারবে না।

বিকল্প উপায়:

ধরুন আপনি কারও কাছে ৫ হাজার টাকা পান। সে একেবারে দিতে পারছেন না। তাকে সহজভাবে ভেঙে ভেঙে দিতে বলুন। যেমন, প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা করে দিক। এতে করে তার ওপরও চাপ পড়লো না, সম্পর্কও ঠিক থাকলো। একজন শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ সিনথিয়া লেট বলছেন—এভাবে সমঝোতা করা সহজ হয়।

সর্বোপরি, অনেকেই ভেবে থাকেন—যে টাকা ধার দিয়েছি, সে ফেরত দিচ্ছে না। নতুন করে আর কখনো ধার দেবো না। এতে করে সম্পর্কও নষ্ট হয়, তেমনি কেউ বিপদে পড়লে প্রয়োজনে সাহায্যও পায় না। সুতরাং ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।

/এসআইএন

Exit mobile version