বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়লো ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া। হাউজ অব কমন্সে রেকর্ড ব্যবধানে, প্রত্যাখ্যাত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট প্রস্তাব। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। আজ রাতেই হতে পারে ভোট।
ব্রেক্সিট বিল নিয়ে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ধাক্কা খাবেন থেরেসা মে, এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছিল ক’দিন ধরেই। তবে ভোটের ব্যবধান এতো বড় হবে, ধারণাও করেনি কেউ। ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কোনো দলের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের ইতিহাস লেখা হলো নতুন করে।
কয়েক দফা পেছানোর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট বিলের ওপর হাউজ অব কমন্সে ভোটাভুটি হয় মঙ্গলবার। পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীনদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও বিলের পক্ষে রায় দেন মাত্র ২০২ জন এমপি। বিপরীতে ভোট পড়ে ৪৩২টি। ২৩০ ভোটের ব্যবধানে বাতিল হয়ে যায় থেরেসা মে’র প্রস্তাব।
প্রস্তাব বাতিল হবার পর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, “হাউজ যে রায় দিয়েছে, তা মেনে নিয়েছে সরকার। এটা স্পষ্ট যে বেশিরভাগ আইনপ্রণেতাই বিলটি সমর্থন করেন না। কিন্তু, তারা কী সমর্থন করেন, তা আজকের ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট নয়। ব্রেক্সিট কার্যকরে ব্রিটিশদের জনমত কিভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত, সে ব্যাপারেও স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারছেন না কেউ। এক্ষেত্রে আস্থা ভোটে উৎরে গেলে সংকট সমাধানে সরকারকে সহযোগিতার বিকল্প নেই।”
বিল ভেস্তে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে থেরেসা মে’র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে প্রধান বিরোধী দল। ধারণা করা হচ্ছে, বুধবার রাতেই হতে পারে আস্থা ভোট। সেক্ষেত্রে বছর না পেরোতেই ফের সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগোবে ব্রিটেন।
ভোট শেষে লেবার পার্টির প্রধান জেরেমি করবিন বলেন, “গত একশ’ বছরে সরকারের এমন পরাজয় নজিরবিহীন। দু’বছরের আলোচনার পর এ বিপর্যয় কাম্য নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট চুক্তির বিপক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এমপিরা জানিয়ে দিয়েছেন। হাউজের আস্থা হারিয়েছেন থেরেসা মে। অথচ এখনও নিজের ব্যর্থ চুক্তি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট কার্যকর হবে না। সংকটের স্থায়ী সমাধান আর মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
২৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার কথা ব্রিটেনের। বিল বাতিলে হুমকিতে পড়েছে সেই সময়সীমা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হুঁশিয়ারি, চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর হলে পরিণতি হবে মারাত্মক। নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনাও নাকচ করেছে জোট।
ফরাসি প্রেসিডেন্টে ইম্যানুয়েল ম্যাকরন বলেছেন, “ব্রিটেনের সামনে তিনটি পথ খোলা। আবার ভোটের উদ্যোগ নেয়া, যাতে আদৌ লাভ হবে বলে মনে হয় না। বা আলোচনার জন্য আরও সময় চাওয়া। কিন্তু আমাদের তরফ থেকে যা করার, তা আসলে আমরা করে ফেলেছি। বাকি আছে- চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট কার্যকর, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ। এতে যুক্তরাজ্যেই ক্ষতি বেশি।”
বিচ্ছেদের চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পুরো ব্রেক্সিট প্রক্রিয়াই স্থগিত রাখার দাবি তুলেছেন অনেক ব্রিটিশ। পরামর্শ দিয়েছেন নতুন করে গণভোট আয়োজনের।

