Site icon Jamuna Television

যে কারণে পটুয়াখালী পৌর নির্বাচন স্থগিত

জাকারিয়া হৃদয়, পটুয়াখালী
বহুল প্রত্যাশিত পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন আবারও স্থগিত হওয়ায় পৌরবাসীর মনে নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কার বা কাদের স্বার্থে বারবার নির্বাচন স্থগিত হচ্ছে সে প্রশ্নও করছেন অনেকে। আদৌ নির্বাচন হবে কি হবে না তা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে রয়েছে নানা শঙ্কা। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত সবশেষ তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতিমধ্যে প্রতীক বরাদ্দ, পোষ্টার ব্যানার, ফেষ্টুন এবং মাইকিংয়ে গোটা শহর যখন জমজমাট ঠিক তখনই গত ১২ ফেব্রুয়ারি পূনরায় এ নির্বাচন আগামী ১ মাসের জন্য আবারও স্থগিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, পটুয়াখালী সদর উপজেলার বহালগাছিয়া নিবাসী মৃত আঃ আজিজ হাওলাদারের ছেলে জনৈক মোঃ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (মামলা নং ১৪৩৪-২০১৯) দাখিল করলে মহামান্য হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি শেখ হাসান আলী এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিল গত ১২ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন ওইদিন থেকে আগামী এক মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত রাখার আদেশ দেন। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেন ১৩ ফেব্রুয়ারি।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কেশবপুর মৌজা ব্যতিত অর্থাৎ পূর্ব হেতালিয়া, পূর্ব শারিকখালী, জৈনকাঠি, শারিকখালী, বহাল গাছিয়া, ডিবুয়াপুর, দূর্গাপুর, বল্লভ, ইটবাড়িয়া, গিলাবুনিয়া ও কালিকাপুর এলাকাসহ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা দেয়ায় শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে এই রিট পিটিশন দাখিল করেন। তিনি তার আবেদনে আরো উল্লেখ করেন, যেহেতু উল্লেখিত এলাকাগুলোকে পল্লী এলাকা থেকে শহর এলাকায় রুপান্তরিত করে ইতিপূর্বে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে এবং গেজেটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে অতএব কেন ওইসব এলাকাকে নির্বাচনী তফসিলের আওতাভুক্ত করা হবে না। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন আগামী এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর উল্লেখিত এলাকা গুলোকে পল্লী এলাকা থেকে শহর এলাকায় রুপান্তরিত করে গেজেটে অন্তর্ভূক্ত করার পর জৈনকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ফিরোজ আলম বাদী হয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (মামলা নং ১১৪৮০-২০১৭ইং)দাখিল করেন ওই গেজেটের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ পল্লী এলাকাকে শহরে রুপান্তরিত না করার দাবিতে। এরপর ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মহামান্য হাইকের্টের বিচারপতি এসএম ইমদাদুল হক পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এবিষয়ে জানতে চেয়ে আদেশ দেন। এরপর এবিষয় আর কিছু জানা যায়নি।

পরবর্তিতে জৈনকাঠি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকার মেজবাহ উদ্দিন হাওলাদার ওরফে কালাই হাওলাদারের ছেলে মোঃ ফরিদ হাওলাদার বাদী হয়ে আরো একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয় কেন নতুন শহরে রুপান্তরিত এলাকাগুলো বাদ দিয়ে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং ওইসব এলাকাগুলোকে কেন অন্তর্ভুক্ত করা হবেনা তা জানতে চেয়ে। এর প্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ইং তারিখ মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ আশফাকুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে এবিষয়ে জানতে চেয়ে আদেশ দেন।

এদিকে নির্বাচন অফিস সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, উল্লেখিত পল্লী এলাকাগুলোকে শহর এলাকায় রুপান্তরিত করে শুধু মাত্র গেজেট প্রকাশ করা ছাড়া পরবর্তি আর কোন কার্যক্রম হয়নি। সেক্ষেত্রে নতুন এলাকায় সীমানা নির্ধারণ, সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক গেজেট তৈরিসহ আরো বিভিন্ন কার্যক্রম থাকা সত্ত্বেও তা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। সে হিসাবে বিগত ২০১৮সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনপূর্বের সীমানা মোতাবেক পৌরসভা ও উল্লেখিত এলাকার ভোটারদের স্ব স্ব ইউনিয়নের মধ্যে থেকে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় গেজেটভুক্ত করে ওই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভুক্তভোগি একাধিক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিমত, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত যে গেজেট অনুযায়ী সাধারণ ভোটাররা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেছে সেই ভোটার তালিকা অনুযায়ীই আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠান হবার কথা।

Exit mobile version