Site icon Jamuna Television

এভারেস্টের বরফ গলে বেরিয়ে আসছে অসংখ্য মরদেহ

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করতে যারা যান, তাঁদের সবাই ভাগ্যবান হন না। পর্বতারোহীদের অনেকেই অভিযানকালে বিভিন্ন কারণে মারা যান। যেহেতু এভারেস্টের বেশিরভাগ অভিযান নেপাল অংশ দিয়ে পরিচালিত হয়, সেহেতু অভিযাত্রীদের কঠিন পরীক্ষার শুরু, বেস ক্যাম্প পরবর্তি খুম্বু হিমবাহেই সমাধি হয় অনেকের। নিশ্চিত না হলেও যখন থেকে হিসাব রাখা শুরু হয়েছে, তারপর থেকে এই সংখ্যা ৩শ’র কম নয় বলেই ধারণা অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা এবং সমিতিগুলোর। মৃতদের-দুই তৃতীয়াংশের দেহাবশেষ এখনো বরফের নিচে সমাহিত।

সম্প্রতি এভারেস্টের খুম্বু হিমবাহের বরফ শুরু করেছে। বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন সময় প্রাণ দেয়া অসংখ্য পর্বতারোহীর মরদেহ। নেপাল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, বসন্তে পর্বতারোহণের ঋতু শুরু হয়। তার আগেই উত্তর দিকে বা পর্বতের চীন অংশে আরোহন বন্ধ রাখা হয়েছে। কেননা বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে, হিমবাহ দ্রুত গলছে। বিজ্ঞানীরা খুম্বু হিমবাহের বিভিন্ন জলাধার ও পুকুরগুলোর পানি বাড়তে দেখছেন, অর্থাৎ বরফ গলছে দ্রুত গতিতে এবং পুকুরগুলোর আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ছোট ছোট একাধিক পুকুর মিলে বড় আকার ধারণ করছে। এসব মরদেহ উদ্ধার কাজে বেশ বেগ পেতে হয় উদ্ধারকারীদের আর এতে খরচও পারে প্রায় পর্বত সমান।

নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রধান অং শেরিং শেরপা জানান, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দ্রুত গলছে বরফের স্তর। ফলে পর্বতের বিভিন্ন অংশে বরফের নিচে দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে থাকা মরদেহগুলো এখন বেরিয়ে আসছে। পর্বতারোহণের মৌসুম চললেও, এভারেস্টের বিভিন্ন ক্যাম্প পর্যন্ত মরদেহগুলো বহন করে নিয়ে আসতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃতদেহ আনতে ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার ডলার খরচ করতে হয়। বীমা না থাকলে যা ব্যক্তি বা রাষ্ট্র পর্যায়ে অপসারণ সম্ভব না। তাছাড়া প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জও অনেক। সম্পূর্ণভাবে জমে যাওয়া একেকটি মৃতদেহ দেড়শ কেজি পর্যন্ত ওজন ধারণ করে। ২৫ থেকে ২৭ হাজার ফুট ওপর থেকে এই ওজন নামিয়ে আনা শেরপাদের জন্য সবসময় সম্ভব না। আবার ইচ্ছে এবং অর্থ থাকলেও আবহাওয়া বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

হাই ক্যাম্প থেকে দেহ উদ্ধার এবং অপসারণ করা উভয়ই ব্যয়বহুল এবং কঠিন। এক একটি মরদেহ নিচে নামিয়ে আনতে খরচ হয় প্রায় ৩৪ থেকে শুরু করে ৬৭ লক্ষ টাকার মতো।

এভারেস্টে অভিযানের সময় মৃত পর্বতারোহীর দেহ সরিয়ে আনাকে অনেক পরিবার ও জাতি আবার অপমান হিসেবে বিবেচনা করে। এছাড়া ধর্মীয় ও সামাজিক কিছু বিশ্বাসের কারণেও স্বজনরা প্রাকৃতিক সমাহিত ব্যাক্তির মরদেহ নামিয়ে আনতে অনীহা জানান অনেক সময়। অনেক পর্বতারোহীর ক্ষেত্রে আবার বাধা নিজের করে যাওয়া উইল। যারা সুপারিশ করে গেছেন, শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে মৃত্যু হলে তাদের দেহ যেন এভারেস্টের বুকেই থেকে যায়।

Exit mobile version