Site icon Jamuna Television

অন্যের ঘরে উঁকি দেয়ায় গলায় ঝাড়ু ও জুতার মালা

পাবনা প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহরে জানালা দিয়ে অন্যের ঘরে উঁকি দেওয়ার অভিযোগে রবিউল ইসলাম (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে গলায় জুতার মালা ও ঝাড়ু পড়িয়ে গ্রাম ঘুরিয়েছেন গ্রাম্য প্রধানরা। শনিবার বিকেলে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা কারিগরপাড়া গ্রামে শালীসের পর এ ঘটনা ঘটে। রোববার (২৮ এপ্রিল) বিষয়টি জানাজানি হয়। কিন্তু এ ঘটনার কিছুই জানে না স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।

এদিকে ঘটনার সময় মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিওটি ফেসবুকেসহ বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পেশায় দর্জি ও ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে তার প্রতিবেশী দিনমজুর নাজিম উদ্দিনের শোবার ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দেন। এ সময় নাজিমের স্ত্রী ঘরে একাই ছিলেন। উঁকি দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবেশী এক গৃহবধূ দেখে ফেলেন এবং এর প্রতিবাদ করলে রবিউল তার গলা চেপে ধরেন। পরে ওই মহিলার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় রবিউল।

এ ঘটনার পর দিনমজুর নাজিম স্থানীয় গ্রাম্য প্রধানদের কাছে অভিযোগ দিলে শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন গ্রাম্য প্রধান দুই পক্ষকে নিয়ে শালিস বৈঠক বসায়। শালিসে উঁকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করায় গ্রাম্য প্রধানরা রবিউলকে গলায় জুতার মালা ও ঝাড়ু পড়িয়ে ঘোরাতে হবে বলে রায় দেন।

এরপর ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার তৈয়ব হোসেন হাতে একটি লাঠি নিয়ে রবিউল ইসলামকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে পুরো পাড়া ঘোরান। তবে গলায় জুতার মালা ও ঝাড়ু পড়ানোর ঘটনাকে অমানবিক বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেকেই। এদিকে ঘটনার সময় বেশ কয়েকজন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে শেয়ার করলে ভাইরাল হয়ে যায়।

বিষয়টি জানতে চেয়ে রোববার দুপুরে শালিসে অভিযুক্ত রবিউল ইসলামের মোবাইলে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ‘আমি একটু পরে কথা বলছি’ বলে লাইন কেটে দেন। পরে কয়েকবার ফোন দিলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে গ্রাম্য প্রধান ও সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। শালিসে রবিউল অভিযোগ স্বীকার করায় গ্রাম্য প্রধানরা রবিউলকে জুতার মালা পড়িয়ে পাড়া ঘোরাতে হবে রায় দেন।’ পুলিশকে না জানিয়ে বিচার-শালিস করে এমন রায় দেয়া এবং ভিডিও করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো একা এই রায় দেইনি। সবাই মিলে রায় দিয়েছে। আর কারা ভিডিও করেছে এটা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি গত তিনদিন ধরে ঢাকায় আছি। এছাড়া কেউ আমাকে জানায়নি।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ মো. নাসীর উদ্দিন বলেন, ‘কেউ আমাকে এমন কিছু জানায়নি বা কোনো অভিযোগও পাইনি। আমি ঘটনাস্থলে এখনই পুলিশ পাঠাচ্ছি।’

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার জানান, গ্রাম্য প্রধানরা বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম আদালত বা থানার মাধ্যমে সুরাহা করতে পারতেন। আমি বিষয়টি শোনার পর থানার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।

Exit mobile version