Site icon Jamuna Television

আরএইচএস বায়িং হাউসের অভিনব প্রতারণা!

এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ‘আর-এইচ-এস’ নামের একটি বায়িং হাউজের বিরুদ্ধে। জালিয়াত চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হবার অবস্থা হয়েছে সাভারের ৫টি তৈরি পোশাক কারখানার। তারা বলছে, ভুয়া এলসি দিয়ে পোশাক তৈরি করেও মালামাল বুঝে নেয়নি কেউ। এতে লাখ লাখ পিস পোশাক নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে কারখানাগুলোর।

রাজধানীর সাভারে অবস্থিত ড্রেস আপ লিমিটেড এমন একটি ভুক্তভোগী কারখানা। ৮ তলা পোশাক কারখানাটিতে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। চলতি বছর মে মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে সাড়ে ৬ কোটি টাকার পোশাক কেনার আদেশ দেয় আর-এইচ-এস নামের একটি বায়িং হাউজ। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রান্সফার করা হয় এলসি। তবে শর্ত ছিলো তাদের পছন্দের চীনা প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে হবে কাপড়, একসেসরিজসহ যাবতীয় কাঁচামাল। নিয়ম মেনেই নির্ধারিত সময়ে শেষ করা হয় উৎপাদন। কিন্তু মালামাল বুঝে নেয়নি কেউ। ওই বায়িং হাউজের এমডি ও সিইও এস এম সাঈদ এবং চেয়ারম্যান সুজন এরপর থেকেই লাপাত্তা।

ড্রেস আপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, এখানে লোকাল বায়িং অফিস আছে, এলসি ক্লিন, কোনো সন্দেহ থাকার কথা না। তারা জানায় পেমেন্ট নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সময়মতো মাল শিপমেন্টের গ্যারান্টিও দেয় তারা। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা সেভাবেই সবকিছু প্রস্তুত করি।

এরপর খোঁজ নিতে শুরু করে কারখানাটি। একসময় কেঁচো খুড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসে সাপ। যোগাযোগ করা হলে, বায়ার প্রতিষ্ঠান ইউকে’র পেনিপ্রাইড, ব্রডস্টোন এবং স্টাইলওয়াইজ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয় এগুলো সবই ভুয়া এলসি। এ জাতীয় কোনো পোশাকের অর্ডার করেনি তারা।

গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা বায়ারদের মেইল দিয়েছি। তখন তারা জানায় যে এগুলো সবই ভুয়া এলসি। এই অর্ডারগুলো তাদের ছিল না।

আরেক ভুক্তভোগী কারখানা ফেমাস ডিজাইন লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার বিলাস মজুমদার বলেন, অর্ডার মোতাবেক আমরা প্রোডাকশন শেষ করি। শিপমেন্টের কথা তুললে তারা গড়িমসি শুরু করে।

জানা গেছে, সাভারের ড্রেস আপ লিমিটেড, ফেমাস গার্মেন্টসসহ পাঁচটি কারখানাকে ২৪ কোটি টাকার পোশাক কেনার আদেশ দিয়েছিল বায়িং হাউজ ‘আর-এইচ-এস’। বিনিময়ে কামিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকার কমিশন। এছাড়া, এলসি দেয়ার অজুহাতে চাপ প্রয়োগ করে, ড্রেস আপ লিমিটেডের কাছ থেকে বাড়তি আদায় করে নেয় আরও প্রায় ১০ লাখ টাকা।

ড্রেস আপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন,  এলসি খোলার কথা বায়ারের। অথচ এখানে কোনো বায়ার নেই। ভুয়া এলসি খুলে প্রতারকচক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, যে ব্যাংকে এলসি খোলা হয়েছে সে ব্যাংকগুলোরও কিছু দায়-দায়িত্ব আছে। তাদের ভেরিফিকেশন প্রসেসে দুর্বলতা ছিল।

এখন স্বল্পমূল্যে পোশাকগুলো বিক্রি করে দেয়া ছাড়া কারাখানা মালিকদের হাতে কোনো বিকল্প নেই। তাদের বক্তব্য, এটা পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।

যমুনা অনলাইন: টিএফ

Exit mobile version