Site icon Jamuna Television

বাবার খ্যাতি, ছেলের বিড়ম্বনা

মুরশিদুজ্জামান হিমু

মনে আছে, রোহান গাভাস্কার নামে একজন ক্রিকেটার এসেছিলেন? ভারতের হয়ে খেলেছিলেন মাত্র ১১টি ওয়ানডে। ব্যাটিং গড় ১৮’র একটু বেশি। সবমিলে করেছিলেন ১৫১ রান। বুঝতেই পারছেন, জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য নিশ্চয়ই ভাল রেকর্ড ছিল না তার। কী সমালোচনাই না বেচারাকে সে সময় সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তাকে নিয়ে যতটা হইচই হয়েছে, অনেকে তার চেয়ে খারাপ খেলেও অতটা প্রশ্নতীরবিদ্ধ হননি। কেন জানেন? কারণ তার বাবা। যারা রোহানকে চেনেন না, তাদের কেউ কেউ হয়ত নামের মিল দেখে বুঝে গেছেন রোহানের বাবা আর কেউ নন, কিংবদন্তী ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার।
স্বভাবতই যখন রোহান খেলতে আসেন, সবাই আশা করেছিল, হয়ত ছাড়িয়ে যাবে বাবাকে। কিন্তু তা কি খুব সহজ? সুনীল গাভাস্কার কি প্রতি প্রজন্মেই একজন করে জন্মান?

অমিতাভ বচ্চন আর তার ছেলে অভিষেকের গল্পটাও একই রকম। অমিতাভের ছেলে বলেই পাহাড়সমান প্রত্যাশা ছিল অভিষেকের প্রতি। কিন্তু অমিতাভের ছেলে বলেই হয়ত অভিষেক অতটা সুনাম কুড়াতে পারেননি। কারণ আগের মতই, বাবার সাথে মেলানো।

এবার আরেকজনের গল্প বলি। আগের দুটো গল্পের চেয়ে ব্যতিক্রম। এক ব্যক্তি প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছেন। পুরো সকালটা শরীর চর্চা করে কাটালেন। পার্কের রাস্তা দিয়ে বেশ খোঁশ মেজাজে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। হঠাৎ পাশ থেকে কয়েকজন তরুণ একটু নিচু গলায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। যা লোকটির কান অবদি এল। তারা বলছে, দ্যাখ দ্যাখ, লোকটা পঞ্চমের (রাহুল দেব বর্মন) বাবা।
বলার দরকার নেই, যে লোকটি পার্ক দিয়ে হাঁটছিলেন, তিনি আরেক লিজেন্ড শচীন দেব বর্মন। বাড়ি ফিরে শচীন কর্তা তার ছেলেকে ডেকে জড়িয়ে ধরলেন। আবেগী বাবার চোখের কোণে হয়ত পানিও জমেছিল তখন। কারণ ছেলে যে বাবার নয়, পরিচিত হয়ে উঠেছে নিজের পরিচয়ে। কারো কারো মতে, সুর-সঙ্গীতের জনপ্রিয়তায় তো রাহুল ছাড়িয়ে গেছেন তার বাবাকেও।

এমন অসংখ্য উদাহরণ আমাদের সামনে আছে, যারা হয়ত সেলিব্রেটি বাবাকে নামের দিক থেকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি। আবার কেউ তা ছাড়িয়ে গেছেন আরও দূর বহুদূর।

আগের গল্পগুলো বলার মূল কারণ হচ্ছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুহাশ হুমায়ূনকে নিয়ে লেখালেখি। একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন বানিয়ে তিনি রীতিমত গালাগালিও খাচ্ছেন অনেকের। এক্ষেত্রেও কারণ ওই একই। নুহাশ যে নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ছেলে।
ফেসবুকে গেল ক’দিন ধরেই স্ট্যাটাসের ফুলঝুরি। অনেকেই বারবার টেনে আনছেন একই রকম কথা। হুমায়ূন আহমেদের ছেলে হয়ে এমন ‘বাজে’ বিজ্ঞাপন কীভাবে বানালেন নুহাশ? কেউ বলছেন, নাহ্, ছেলেটা বাবা’র মত হতে পারবে না। কয়েক জনকে বলতে দেখলাম, নুহাশ নাকি বাবা’র নাম ডোবাবে।

নুহাশকে বার বার তার বাবার সাথে মিলিয়ে ভুল করছি আমরা। তার বানানো বিজ্ঞাপন সবার ভাল না-ই লাগতে পারে। একজন তরুণের চিন্তাধারা ওতটা গোছানো হবে না, এটাই স্বাভাবিক। যত দিন যাবে, নুহাশ হয়ত আরও পরিপক্ক হয়ে উঠবেন। সুন্দর বিজ্ঞাপন বানাবেন, নাটক বানাবেন, হাত দেবেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে। তাই বলে এখনই এমন বেফাঁস সমালোচনা? ফেসবুকের যুগ বলেই হয়ত সম্ভব।

হুমায়ূন আহমেদ যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, তা স্পর্শ করা নিশ্চয়ই খুব কষ্টসাধ্য। কিন্তু কেউ কি বলতে পারে, আজকের তরুণ নির্মাতা নুহাশ আগামি দিনে তার বাবাকে ছাড়িয়ে যাবেন না? যেতেও তো পারে। এমনও তো হতে পারে, পঞ্চাশ বছর পর কেউ ‘নন্দিত নুহাশ’কে নিয়ে কলাম লিখছেন। সবাই পড়ছেন আর বলছেন, ছেলেটা বাবা’র চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে!

Exit mobile version