Site icon Jamuna Television

সেই কিশোরী বৃষ্টি ফিরে পেল তার অভিভাবক

সেই কিশোরী বৃষ্টি ফিরে পেল তার অভিভাবকদের। প্রকৃতপক্ষে তার নাম বৃষ্টি নয় বলে জানান তার পালিত অভিভাবক এবাদুল ইসলাম। কিশোরীর নাম হলো সায়মা (১৩)। সে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামে সামসের ওরফে সামসুদ্দিনের মেয়ে।

২০০৯ সালে সায়মার মা রেহানা বেগমকে গলাটিপে হত্যা করে সামসুদ্দিন। এ ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছেন। সায়মার একটি ছোট বোনও আছে। বোনটির নাম ফাতেমা বেগম।

মাকে হত্যার পর বাবা পালিয়ে গেলে দুটি বোনই অসহায় হয়ে পড়ে। তার নানা-নানি এখনও জীবিত আছে কিন্ত তারা দরিদ্র হওয়াই মায়ের মৃত্যুর পর সায়মাকে ৯ বছর আগে ঢাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবাদুল ইসলামের বাসায় পালক দেন। ছোট বোনটিকে এবাদুলের ভায়ের বাসায় একইভাবে পালক দেন।

এবাদুল ইসলামের তিন ছেলে ও এক মেয়ে থাকা সত্ত্বেও সায়মাকে নিজের মেয়ের মত আদর-স্নেহ দিয়ে লালন-পালন করেছেন। ব্যবসায়ী এবাদুল ইসলামের বাসায় মীম নামের একজন কাজের মেয়ে ছিল।

কয়েকদিন আগে ব্যবসায়ীর বাসার আলমিরা থেকে আড়াই লাখ টাকা চুরি হয়। তারা সন্দেহ করে ওই কাজের মেয়েকে। গত ১৭ মে সকালে কাজের মেয়েটি কৌশলে পালিয়ে যায়। এদিন বিকালে সায়মাও দোকানে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর এবাদুল ইসলাম তাকে খুঁজে না পেয়ে রাতে মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করে। এদিকে সায়মা পালানোর পরদিন গত ১৮ মে ঢাকার সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ভৈরব আসতে সে বাসে উঠে। এই বাসে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার একটি স্কুলের মহিলা শিক্ষকও তার পাশের সিটে বসেন।

কিশোরী সায়মার চেহারা সুন্দর দেখে বাসে প্রতারকরা তার খোঁজখবর নিতে জেরা করে। ঘটনাটি দেখে শিক্ষিকা মেয়েটিকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন। বাসটি এদিন ভৈরব আসলে শিক্ষিকা ওই কিশোরীকে নিয়ে পৌর মেয়রের অফিসে যান।

ভৈরব পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ সব ঘটনা শুনে ভৈরব থানা পুলিশকে অবহিত করে থানায় জিডি করার পর তার জিম্মায় সায়মাকে রেখে দেন। এরপর ফেসবুকে প্রচারসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যেমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

খবরটি দেখে ব্যবসায়ী এবাদুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী মোমতাজ বেগম ও পুত্র বখতিয়ার আবিদ খানকে (পলাশ) নিয়ে সোমবার সকালে ভৈরব পৌরসভার মেয়রের অফিসে আসেন এবং কিশোরী সায়মার সব ঘটনা অবহিত করেন।

এ সময় এবাদুল ইসলাম জানান, ওই কিশোরীর নাম বৃষ্টি নয়, প্রকৃত নাম সায়মা।

এ বিষয়ে সায়মাকে জিজ্ঞাসা করলে কিশোরী জানায়, ভয়ের কারণে প্রকৃত নামটি বলেনি।

সায়মার খোঁজ পেয়ে তাকে নিতে আসলেও সে পালিত বাবার সঙ্গে যেতে আগ্রহী নয়। সে বার বার বলছিল, আমি এই বাসায় আর যাব না। বাসায় তাকে নির্যাতন করা হয় বলে কিশোরী অভিযোগ করে।

যদিও তার অভিযোগগুলো ব্যবসায়ী অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাকে আমার মেয়ের মতো আদর-স্নেহ দিয়ে ৯ বছর যাবত লালন-পালন করেছি।

এদিকে সায়মার নানা মো. সাকিব ও নানি সালেহা বেগমকে মোবাইলে সব ঘটনা জানালে তারা বিকালে ভৈরবে পৌঁছেন। তাদের বাড়ি-ঘর না থাকায় তারা এবাদুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জের চারাখালী গ্রামে বসবাস করেন। এবাদুল ইসলামের সহযোগিতায় তারা বেঁচে আছেন বলে জানান তিনি।

এ কারণে সায়মা বার বার বলছিল আমাকে নানা-নানির কাছে হস্তান্তর করলে তারা আমাকে আবার এবাদুলের কাছে দিয়ে দিবেন।

পরে তাকে বুঝিয়ে ভৈরব থানা পুলিশের মাধ্যমে নানা-নানির কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় তাদেরকে বলা হয় ভবিষ্যতে সায়মাকে যেন নির্যাতন না করা হয় বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

ব্যবসায়ী এবাদুল ইসলাম জানান, আমার বাসা থেকে আড়াই লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল চুরি হয়েছে। এ কারণে সায়মা ভয়ে আমার সঙ্গে যেতে চায়নি।

তিনি বলেন, টাকা চুরির ঘটনাটির সঙ্গে কাজের মেয়ে মীম জড়িত রয়েছে। মীমের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। হয়তো এ কারণে ভয় পাচ্ছে আমার সঙ্গে যেতে। তবে আমার সঙ্গে না গেলেও তার খোঁজ পেয়ে স্বস্তি পাচ্ছি।

নানা সাকিব মিয়া জানান, আমার নাতনির বাবা থেকেও নেই। সে আমার মেয়েকে হত্যা করে ৯ বছর যাবত পলাতক রয়েছে। আমি দরিদ্র মানুষ তাই এবাদুল ইসলামকে দিয়েছিলাম সায়মাকে মেয়ের মতো করে বড় করতে। পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে তাকে ফিরে পেয়েছি তাতে শুকরিয়া।

Exit mobile version