ভারতের আসাম রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেছেন, মানুষ অল্প বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হয় মূলত তাদের পাপের কারণে। পাপের শাস্তি হচ্ছে ক্যান্সার।
এই বিজেপি নেতা বুধবার গোহাটিতে এক অনুষ্ঠানে আরও বলেছেন, দুর্ঘটনায় যারা আহত বা নিহত হওয়াও পাপের শাস্তি। কাজে ফাঁকি দেওয়া পাপ। আর সে পাপের শাস্তি ভগবান দেবেনই। কারও ক্যান্সার হতে পারে, কারও হবে অকাল মৃত্যু।
হিন্দুস্তান টাইমস শর্মার বক্তব্য উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘মানুষ তার পাপের শাস্তি থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারে না। অনেকে ভাবেন, কেন একজন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়? কেন একটা যুবক ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়? কিন্তু যদি পেছনের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন এটি সৃষ্টিকর্তার বিচার ছাড়া কিছু নয়।’
এমনকি পিতার পাপের ফল পুত্রকেও ভুগতে হতে পারে বলে শিক্ষকদের সতর্ক করলেন হিমন্ত। তার এই বক্তব্যকে ঘিরে শিক্ষক মহল থেকে সর্বস্তরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সরব বিরোধী রাজনীতিকরাও। কিন্তু একদা কংগ্রেসি, এখন বিজেপি হিমন্তবিশ্ব তার বক্তব্যে অনড়।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের কাজে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। কোথাও স্কুলের ক্লাস না নিয়ে প্রাইভেট টিউশনে ব্যস্ত শিক্ষক, কোথাও বা নিয়মিত স্কুলেই হাজির হন না শিক্ষক, আবার কোথাও সামান্য মাসোহারায় বেকার কোনও যুবককে ক্লাসের দায়িত্ব দিয়ে মাসে একবার খাতায় সই করেন শিক্ষক। মন্ত্রীর ধমক-ধামক, সরকারি নোটিসেও কাজ হচ্ছে না। অভিযোগ, অকুতোভয় শিক্ষকদের একাংশ।
বুধবার নতুন শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেওয়ার এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শিক্ষা তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত। এই মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠেই তিনি ভগবানের দোহাই পাড়তে শুরু করেন।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের দেবব্রত শইকিয়ার কথায়, ‘হিমন্ত নিজে ক্যান্সার রুখতে তামাকবিরোধী আইন তৈরি করিয়েছেন। ক্যান্সার গবেষণায় এত খরচ করছে কেন্দ্র ও রাজ্য। সব যদি পাপ ও পূর্বজন্মের কর্মফলই হয়, তা হলে সব গবেষণাই তো অর্থহীন!’ বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, শর্মা রাজ্যে ক্রমবর্ধমান ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতাকে ঢাকতে ধর্মের দোহাই দিচ্ছেন।
বিরোধী এআইইউডিএফের তরফে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিজ্ঞানের যুগে খোদ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মানসিকতা যদি এমন হয়, তবে রাজ্যের উন্নতি অসম্ভব।’ তার মতে, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হিমন্ত এমন মন্তব্য করে নিজের দায় এড়াতে চাইছেন।
পরে হিমন্ত বলেন, ‘আমি কোনও নতুন কথা বলিনি। বলেছি, আমাদের সব কষ্টই কৃতকর্মের ফল। গত জন্মের কর্মফল এ জন্মেও ভোগ করতে হয়—এটাও ধর্মীয় বিশ্বাস। সে কথাই স্মরণ করিয়েছি মাত্র।’

