Site icon Jamuna Television

‘অপমানের জবাব’ দিতেই ৬৫ বছর বয়সে সমাপনী পরীক্ষা!

ব্যাংকে গিয়েছিলেন একাউন্ট খুলতে। ফরম পূরণের পর সুন্দরী বেগমকে বলা হয় স্বাক্ষর করতে। কিন্তু স্বাক্ষর করবেন কিভাবে, স্কুলেই তো কখনো যাননি তিনি। এই অক্ষমতার কারণে ব্যাংক কর্মকতা সুন্দরী বেগমকে শুনিয়ে দিলেন কিছু বাঁকা কথা। অপমানিত বোধ করলেন বৃদ্ধ এই নারী।

এরপর জেদ চেপে গেল সুন্দরী বেগমের মনে। সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে স্বাক্ষর দেয়া শিখতেই হবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। ভর্তি হলেন স্কুলে! ৫ বছর আগের ঘটনা সেটি। তখন প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ত্রিশালের এই নারী ৫ বছর ধরে নিয়মিত ক্লাস করে এবার দিচ্ছেন সমাপনী পরীক্ষা।

জানালেন, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার মধ্য দিয়ে অপমানের বদলা নিতে চান তিনি। আরও বললেন, পঞ্চম শ্রেনিতেই থামতে চাননা। নিতে চান আরো উচ্চশিক্ষা। শিক্ষা অর্জনে তার একাগ্রতা ও পরিশ্র্রম দেখে উৎসাহ পাচ্ছেন স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও।

ত্রিশালের সাউথকান্দা গ্রামে সুন্দরী বেগমের ঘর থেকে পড়ার শব্দ শোনা যায় ভোর বেলাতেই। সূর্য উঠার সাথে তিনিও উঠে পড়তে বসেন। কারণ এখন সমাপনী পরীক্ষা চলছে।

এই বয়সে এসে পড়াশোনার ঝক্কি সামলাতে তার পাশে আছে বর্গাচাষী স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। সুন্দরী বেগমের স্বামী আবুল হোসেন বলেন, প্রথমে আমি বাধা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে, এসব বাদ দেও। এখন আর বাধা দেই না। সে পড়া চালিয়ে যাক।

বন্ধুর মতোই সুন্দরী বেগমের সাথে মেশছে স্কুলের শিশুরা। পরীক্ষাও দিতে যাচ্ছেন এক নাতী ও সহপাঠিদের সাথেই। পরীক্ষায় ভালো করতে প্রাইভেটও পড়েছেন সুন্দরী। তার আগ্রহ দেখে এগিয়ে এসেছেন শিক্ষকরাও।

ত্রিশাল চাউলাদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ বদরইদ্দিন বলেন, সুন্দরী বেগম একজন সাহসী নারী। তার এই উদ্যোগ এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

জানাযায় ৫ বছর আগে সুন্দরী বেগম
স্থানীয় কৃষি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে যান। সেখানে স্বাক্ষর ভুল হওয়ায় ব্যাংক ম্যানেজারের ভৎসনার শিকার হন। সেই ক্ষোভ থেকেই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি চান তাকে দেখে দেশের নাড়ীরা শিক্ষা অর্জনে আরো এগিয়ে আসুক।

/হোসাইন শাহীদ, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

Exit mobile version