Site icon Jamuna Television

দখলে খিদির খাল এখন ছোট ছোট নালা

রাজধানীর উত্তরা ও তুরাগের পয়ঃনিষ্কাশনের একমাত্র খিদির খালটি বর্তমানে দখলের পথে। প্রতিনিয়ত এ খালটি ঘিরে পাল্লা দিয়ে চলছে দখলের মহোৎসব। খালটি দখল নিয়ে হামলা-মামলা ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

দখল আর দূষণের কবলে পড়ে উত্তরা ও তুরাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ এ খালটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার এ খালটি তুরাগ নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে তুরাগের রানাভোলা, ফুলবাড়িয়া, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড়, দলিপাড়া, বাউনিয়া, মিরপুর আলোকদি হয়ে আবার তুরাগ নদে গিয়ে মিশেছে।

অসাধু চক্রের দখল আর রাস্তা ও রাজউকের প্লট নির্মাণের কারণে খালটি এরই মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ছোট ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর অংশে লেকের উত্তর প্রান্তে ময়লা ফেলে দখল করে প্লট তৈরি করা হয়েছে।

১০ নম্বর সেক্টরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বহমান খালটি এখন পুরোপুরি নর্দমায় পরিণত হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালের পাড় দখল করে প্লট, ফ্ল্যাট ও দোকানঘর নির্মাণের উৎসব চালালেও পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেই ঢাকা ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের।

সরেজমিন দেখা যায়, তুরাগের ১০ নম্বর সেক্টর স্লুইচ গেট থেকে ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড় পর্যন্ত দুই পাশে এখন দখলের চিত্র। বিশেষ করে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১৯নং সড়ক ও তুরাগের টেকপাড়া ব্রিজ এলাকাটি দখলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কয়েক দিন আগে উচ্ছেদ অভিযান চালান নবগঠিত ৫১নং ওয়াডের্র কাউন্সিলর মো. শরিফুর রহমান। উচ্ছেদের পর পুনরায় দখলে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় অসাধু কিছু ভূমিখেকো ও হাইব্রিড নেতা। এলাকাটি নবগঠিত দুই ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী হওয়ায় দখলের প্রভাবটা একটু বেশি।

কিছু নেতা এ খালের ওপর দোকান বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। সেজন্য দখলে-দূষণে বিলীন হতে চলেছে খিদির খালটি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অদূরভবিষ্যতে তুরাগবাসীকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

খিদির খালটির একপাশ দিয়ে পাইলিং করে দখল করা হচ্ছে খালের জায়গা। খালপাড়ের ব্রিজের পাশে খালের অনেকটুকু জায়গা দখল করে ঢালাই দিয়ে উঁচু আরসিসি পিলারের ওপর স্থায়ী স্থাপনা (দোকানঘর) নির্মাণ করছেন স্থানীয়রা।

এ ছাড়াও বাড়ি নির্মাণের জন্য খালের পাড়ে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে বেশকিছু অংশ। এ কারণে খালে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে খালটি আরও সংকুচিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে বলে এলাকাবাসীর শঙ্কা।

বর্তমানে সামান্য বৃষ্টিতেই তুরাগের এ খালটি পরিণত হয় ময়লা-আবর্জনার জলমহালে। যথাযথ সুয়ারেজ লাইন না থাকায় টেকপাড়ার এ খালটি দিয়ে প্রতিনিয়ত আসে বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা পানি।

অতিদ্রুত এ খালটি দখলমুক্ত না করা হলে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেবে। আর এসব সমস্যা সমাধানে দুই ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খিদির খালের পাশেই অবৈধভাবে ঘরে ওঠা গ্যারেজ মালিক জানান, বহুদিন ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করার কারণে ভরাট হয়ে গেছে খালটি। ৩-৪ বছর আগে ঢাকা ওয়াসা নামে মাত্র খালটি পরিষ্কার করেছিল। দীর্ঘদিন আর আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়নি।

ফলে খালের পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ময়লা-আবর্জনায় জন্মাচ্ছে মশা। যে যেমন করে পারছে দখল করে স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আবারও অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে।

তুরাগের স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, এ পর্যন্ত অনেক মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশের মতো আন্দোলন করেছি। তবু ভূমিখেকোদের হাত থেকে খিদির খাল রক্ষা করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খিদির খালের দু’পাশে কোনো ধরনের অবৈধ স্থাপনা থাকতে পারবে না।

যদি এমন কোনো দোকানঘর গড়ে ওঠে, তাহলে প্রশাসনিকভাবে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। সিটি কর্পোরেশন থেকে এখনও বাজেট পাইনি। বাজেট পেলে খিদির খালের দু’পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে বৃক্ষরোপণ করা হবে।

সূত্র: যুগান্তর

Exit mobile version