Site icon Jamuna Television

মৃত্যুর জন্য যে শহরে ভিড় জমায় মানুষ

বয়স বাড়লেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উত্তরপ্রদেশের বারানসি শহরে এসে ভিড় জমায় মানুষ। উদ্দেশ্য, পবিত্র ভূমিতে মৃত্যুর জন্য প্রহর গোনা। পৈতৃক ভিটেমাটি ছেড়ে এ শহরে এসে উঠে পড়ে হোটেলে। অনেকে ৩০-৪০ বছর এখানে বসবাস করেন। তাদের বিশ্বাস, পবিত্রভূমি বারানসিতে মৃত্যু হলে তারা স্বর্গে যাবেন। একই সঙ্গে জন্মচক্র থেকে নিজেদের পরিত্রাণ ঘটবে।

বিবিসি জানায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশ্বের অন্যতম পবিত্র শহর বারানসি। যেটা বেনারস বা কাশি নামেও পরিচিত। ভারতের পৌরাণিক কাহিনী মহাভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্র পঞ্চপাণ্ডব তাদের চাচাতো ভাইদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভের পর নিজেদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে এখানেই হাজির হয়েছিলেন। সেই ধারণা থেকেই শত শত বছর মানুষ এখানে ভিড় জমান। হিন্দু ধর্ম গ্রন্থানুযায়ী, বারনসিতে মৃত্যু এবং এখানকার গঙ্গা নদীর তীরে শবদাহ হলে তিনি পুনর্জন্মের চক্র ভাঙতে সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে তিনি পাপ থেকে পরিত্রাণ পাবেন। প্রতিদিন শত শত ভ্রমণকারী নিজেদের পরিবার নিয়ে এ পবিত্রভূমি দেখতে ভিড় জমান। নিজেদের মৃত আত্মীয়স্বজনদের জন্য ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এখানে ধূমপান, যৌনক্রিয়া, যে কোনো ধরনের মাংস, ডিম পেঁয়াজ-রসুনের খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ। মৃত্যুর আশায় মানুষ এখানে যেসব হোটেলে থাকেন, সেগুলোকে হোটেল না বলে পরিত্রাণের ঘর বলে ডাকা হয়। আর যারা এখানে বসবাস করেন, তাদের বসবাসের প্রক্রিয়াকে বলা হয় কাশিবাস। এসব পরিত্রাণের ঘর বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। যারা এসব পরিত্রাণের ঘরে বসবাস করতে আসেন, তারা নিজের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকার বাসনা নিয়ে আসেন। মুক্সু ভাওয়ান নামে এখানে এমনই একটি পুরনো পরিত্রাণের ঘর রয়েছে।

এখানকার ম্যানেজার ভিকে আগারওয়াল বলেন, প্রতিবছর আমাদের কাছে কয়েক টন আবেদন জমা পড়ে। নিজের খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য রয়েছে- আমরা তাকেই এক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা ৬০ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তিকে এখানে থাকার ক্ষেত্রে নির্বাচিত করি না। কাশিবাসের জন্য নিজের খরচ চালানোর জন্য আমরা এক লাখ রুপি অনুদান নিই। বিনিময়ে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানে থাকতে পারবেন। তবে তাদেরকে নিজের রান্না নিজেকেই করতে হবে। এ পরিত্রাণালয়ে কিছু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমও রয়েছে। যেখানে রুমের সঙ্গে সংযুক্ত বাথরুম রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাদের ওষুধের ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে দেখেন না মুক্তি ভাওয়ান নামের একটি পরিত্রাণালয়ের কেয়ারটেকার নরহরি শুকলা।

Exit mobile version