Site icon Jamuna Television

এক যুদ্ধাহত গ্ল্যাডিয়েটরকে ভুলবেন না যেন

ক্রাচ হাতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

আহমেদ রাকীব

‘একজন যুদ্ধাহত গ্ল্যাডিয়েটরকে নিশ্চয়ই ভুলবো না। ‘ আমরা এমন নিশ্চয়তা না দিতে পারলেও, তিনি জানেন পান থেকে চুন খসলেই তাঁর মুণ্ডুপাত হবে। তার দলে থাকা নিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলবেন। ক্রিকেটপ্রেমীদের এমন আচরণ তার সয়ে গেছে। খুব বেশি আশাও করেন না। শুধু জানেন, ২২ গজের গালিচায় নামলে দেশের প্রতি প্রগাঢ় মমত্ববোধ। বলছি আমাদের সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কথা।

আপাত দৃষ্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা খুব সহজ হলেও, এর নেপথ্যে কিন্তু লুকিয়ে আছে এক যুদ্ধাহত গ্ল্যাডিয়েটরের অসামান্য অবদান। ম্যাচের বয়স তখন ৩২ ওভার। মুজিব উর রহমানের বলে লেগ বিফোরে কাটা পড়েছেন সৌম্য সরকার। কমপক্ষে ৮-১০ ওভার ক্রিজে সঙ্গ দিতে হবে মুশফিককে। একটু সেট হলেই বড় শট খেলে পুষিয়ে দেয়া সম্ভব। ১৫১ রানের সংগ্রহ বাকি ১৮ ওভারে ২৭০-২৮০ পর্যন্ত নিতে পারলেই হেসে-খেলা ম্যাচ জেতা সম্ভব। এমন সব জটিল সমীকরণ যিনি মেলাচ্ছেন তিনি নিজেই জানতেন কাজটা আসলে কতোটা অসাধ্য। মন চাইলেও শরীর বিশেষ করে ডান পা যে বিদ্রোহ করছে।

উইকেটে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মাহমুদউল্লাহ টের পেলেন টেপ পেচিয়ে মাঠে নামলেও আসলে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। খোঁড়াতে খোঁড়াতেই কয়েক ওভার কাটিয়ে দিলেন। ফিজিও এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেন। কিন্তু, অসহ্য ব্যাথা কিছুতেই কমছে না। খুব ভাল করেই জানেন, খোঁড়া পা নিয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে গেলে গভীর শঙ্কার মধ্যে পড়বে টাইগারদের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। দ্বিতীয় দফা মাঠে এসে ফিজিও আবারও ব্যাথানাশক ঔষধ দিলেন। ঔষধের কার্যকারিতা শুরু হয়নি। অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি কিন্তু উইকেট ছেড়ে যাননি মাশরাফীর দৃষ্টিতে দলের বিপদের সবচেয়ে বড় এই বন্ধু। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই সঙ্গ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমকে। দৌড়ে দুই, এমনকি তিন রানও নিয়েছেন। গড়ে তুলেন গুরুত্বপূর্ণ ৫৬ রানের পার্টনারশিপ। ডান পায়ে রীতিমতো অকেজো থাকলেও, হাঁকিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন ২ বাউন্ডারি। রানের গতি আরও বাড়াতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ২০৭। ২৭ রানের ঐ কার্যকরী ইনিংসে কার্যত ম্যাচ জয়ের ভীত পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। রানের বিচারে তো অবশ্যই সেরা ইনিংস না, কিন্তু আত্মবিশ্বাসের যে টোটকা সতীর্থদের মধ্যে সঞ্চারন করেছেন সেটিই ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কাফ মাসলের ইনজুরির কারণে ফিল্ডিংয়ে আর মাঠে নামা হয়নি। ম্যাচের পর স্ক্যান করানো হয় ডান পায়ে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আগেই জানতেন খারাপ কোন খবর অপেক্ষা করছে, এবার জানলেন অন্যরা। স্ক্যানে ধরা পড়েছে গ্রেড ওয়ান টিয়ার।

এসব ইনজুরিতে কমপক্ষে ৭-১০ দিনের বিশ্রামে থাকা জরুরী। হিসেব বলছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুস্থ হলেও, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে অনিশ্চিত বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই আনসাং হিরো। ২ জুন বার্মিংহামের এজবাস্টনে সেমিফাইনাল সম্ভাবনা জিইয়ে রাখার মিশনে ২ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের মুখোমুখি হবে মাশরাফী বাহিনী। ডেথওভারে নিজের সেরা অস্ত্রের খেলা নিয়ে শঙ্কা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের আনন্দের ফাঁকে বড় দুশ্চিন্তা মাহমুদউল্লাহ’র একাদশে থাকা না থাকা।

দমবন্ধ সে পরিস্থিতি থেকে সতীর্থদের মুক্তি দিলেন খোদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই। জানিয়ে দিয়েছেন ভারত ম্যাচের আগেই পূর্ণাঙ্গ ফিট হয়ে উঠবেন। আশ্বস্ত করেছেন নিজের শতভাগ উজাড় করে চেষ্টা করবেন টাইগারদের সেমিফাইনাল সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার। এমন নির্ভীক গ্লাডিয়েটরকে আমরা ভুলে যাই কী করে?     

বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন

Exit mobile version