Site icon Jamuna Television

রাজধানীর দারুসসালাম: নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত বাসিন্দারা

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত হয়ে পড়েছে নগরীর দারুসসালাম এলাকার বাসিন্দারা। কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না তারা।

বড়বাজার এলাকায় অবস্থিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টারটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সর্বাধুনিক ও সর্ববৃহৎ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।

প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেন্টারটির নির্মাণ কাজ ৭-৮ বছর আগে শেষ হয়েছে। প্রতি বছর আসবাবপত্র ও বিভিন্ন উপকরণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরকারি খরচে সেগুলো মেরামতও করা হয়।

অথচ এটি এখনও চালু হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে দারুসসালাম এলাকার অধিকাংশ জায়গা। এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কল্যাণপুর ‘খ’ খাল ময়লা আবর্জনা ও বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনার দখলে থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

এখানকার অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার প্রকোপ বেশি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে থাকেন।

বাগবাড়ি ও কোটবাড়ি এলাকার বেশিরভাগ সড়ক অপ্রশস্ত এবং সরু। এ সড়কে রিকশা ছাড়া অন্য যানবাহন চলতে পারে না।

দারুসসালাম এলাকার বেড়িবাঁধে অবস্থিত বড়বাজারটি কিছুদিন আগে তুলে দেয়া হয়েছে। প্রায় দেড়শ’ বছর আগের এ বাজারটির পূর্বনাম ছিল সিদ্ধিরবাজার। বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছেন না।

এছাড়া যত্রতত্র অবৈধ দখল, চুরি-ছিনতাই বেড়ে যাওয়া, অনুপযোগী খেলার মাঠ ও অপরিকল্পিত নগরায়নে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে দারুসসালাম এলাকার বেশ কিছু অংশ।

বর্ধনবাড়ি, আনন্দনগর, বসুপাড়া, উত্তরপাড়া, ঋষিপাড়া, টোলারবাগ ৩ নং গেট নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে খালের ময়লা-আবর্জনা মহল্লার অলিগলিতে ঢুকে পড়ে।

ময়লা-আবর্জনা মাড়িয়ে বাসিন্দাদের চলাচল করতে হয়। বৃষ্টির পানি কয়দিন পর সরে গেলেও ময়লা-আবর্জনা চলাচলের রাস্তায় পড়ে থাকে।

আনন্দনগর এলাকায় কল্যাণপুর ‘খ’ খাল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা ও বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরে গিয়ে খালটি কোথাও ২ ফুট আবার কোথাও ১ ফুটের সরু নালায় পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ৩০ ফিটের এ খালটি যে যার মতো করে দখলে নিয়েছে। আবার অনেকেই জানেন না এটি খাল নাকি ড্রেন?

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৫ সালে বসুপাড়া নামা এলাকায় ৩ ফুটের পাইপ লাইন বসিয়ে গাবতলী পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। নামা এলাকার পানি গাবতলীতে নেয়ার উদ্দেশ্যেই এ পাইপ লাইন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

দারুসসালাম থানা সংলগ্ন গোলারটেক মাঠটি থানার গাড়ির গ্যারেজে পরিণত হয়েছে। মাঠটি সংস্কার ও নজরদারির অভাবে খেলাধুলার উপযোগিতা হারিয়েছে অনেক আগেই।

স্থানীয় কয়েকজন তরুণ ও ক্রীড়ামোদি বাসিন্দা জানান, এত বড় মাঠ থাকলেও খেলার পরিবেশ নাই। বিভিন্ন সংস্থার দখলে রয়েছে মাঠটি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রউফ বলেন, এত সুন্দর সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টারটি থাকতে এলাকাবাসী তা ব্যবহার করতে পারছে না। তাহলে এটি কাদের জন্য বা কী উদ্দেশ্যেই করা?

বেড়িবাঁধের বড় বাজার থেকে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে প্রভাবশালীরা অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ডসহ গাড়ির গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ ও ডেন্টিং ও পেন্টিং কারখানা করেছে। গাড়ির ওয়ার্কশপে দিনরাত কাজ হয়।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কারখানা ও ওয়ার্কশপের বিকট শব্দে তাদের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। বেড়িবাঁধের তুরাগ নদের দু’পাশে অবৈধ ২০-২৫টি বালুর গদি রয়েছে।

গুলিস্তান ও বাবুবাজারমুখী যানবাহনে বাতাসে বালু উড়ে এসে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। চোখেমুখে কিছুই দেখা যায় না।

দ্বীপনগর নগর এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের ৫২ একর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বস্তি। স্থানীয়রা জানান, এ বস্তির নাম মিঠুর মার বস্তি।

বস্তির মালিক মিঠুর মা ও প্রভাবশালীরা নিয়মিত বস্তিতে মাদকের হাট বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করছেন। বস্তিতে পানি ও বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ দিয়ে একটি পক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

ডিএনসিসি ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুম বলেন, আমি কিছুদিন আগে কাউন্সিলর নির্বাচিত হই। তবে আগের কাউন্সিলর অনেক কাজ করেছেন। ওয়ার্ডে অনেক সমস্যা রয়েছে।

তা সমাধানের চেষ্টা করছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বস্তি উচ্ছেদের জন্য প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশনের দখল করা জায়গাসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা খুব শিগগির উচ্ছেদ করা হবে। আশা করি স্বল্প সময়ের মধ্যে ওয়ার্ডবাসীর অন্যান্য সমস্যাও সমাধান হবে।

Exit mobile version