Site icon Jamuna Television

কুড়িগ্রামে ‘জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পে’ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ‘যার জমি আছে-ঘর নেই’ প্রকল্পে কুড়িগ্রাম ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় তালিকায় নাম থাকলেও এক বছরেও ঘর জোটেনি অনেকের ভাগ্যে। উঠেছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ।

এছাড়াও সরকারের দেয়া এসব ঘরে নিম্নমানের খুঁটিসহ ঘর ও টয়লেটের কাজ অসমাপ্ত রাখার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও মেলেনি সুরহা।

উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তরছাট গোপালপুরের বাসিন্দা মৃত: ইব্রাহিমের স্ত্রী হালিমা বেওয়া(৪৫)। ঘরে ২টি কন্যা সন্তান রেখে অসুস্থ অবস্থায় স্বামী মারা যায় প্রায় ২০ বছর আগে। অভাব অনটনের সংসারে অন্যের সাহায্য আর বাবার বাড়ির সহযোগিতায় কোন রকমের দিন পার করছেন হালিমা বেওয়া। স্বামীর পৈতৃক সুত্রে পাওয়া ৫শতক জমিতে কোন রকমেই দিন কাটচ্ছে তার। গত অর্থ বছরে বিনামূল্যে সরকারের দেয়া জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পে তালিকায় নাম থাকলেও এখনও সেই ঘর মেলেনি।

একই ইউনিয়নের শালঝোড় গ্রামের মৃত: আজগর আলীর স্ত্রী হাউসি বেওয়া (৫০) এবং কেরামত আলী (৫০)’র নাম প্রকল্পে থাকলেও ঘর জোটেনি তাদের কপালেও। দরিদ্র পীড়িত জেলা কুড়িগ্রামে গৃহহীনদের মাথা গোঁজার ঠাই করে দেবার জন্য বছর কয়েক থেকে গৃহ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। অথচ মাঠ পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানান অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাজ শেষ না করেই কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়েছে।

ঘর এবং টয়লেটের কাজ শেষ না করেই ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে সুবিধাভোগীদের নিকট। ঘর নির্মাণের খুঁটি এবং মেঝেতে নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। কোথাও কোথাও বানানো খুঁটির বদলে কেনা খুঁটি দেয়া হয়েছে। প্রায় ১০ফিট উচ্চতা টিনসেড ঘরে দেয়া হয়েছে দুর্বল কাঠ এবং বাশ। ঘরের দরজা বানানো হয়েছে টিন দিয়ে। এছাড়াও ঘর নির্মাণে বেচে যাওয়া অর্থ দেয়া হয়নি সুবিধাভোগীদের। উল্টো সুবিধাভোগীরাই ধারদেনা করে ঘরের সরঞ্জামাদি বহন করেন। এক লক্ষ টাকার ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে গড়ে প্রতি ঘর ৫০থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হবার অভিযোগ করেন সুবিধাভোগীরা।

হালিমা বেওয়া, হাউসি বেওয়া এবং কেরামত আলী বলেন, সরকারের দেয়া ঘরের তালিকায় হামার নাম ছিল। অথচ এক বছর হয়া গেলই কোন ঘর পাই নাই। ঘরের জন্য চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও স্যারের কাছে গেছি কিন্তু কোন উপকার হয় নাই। ঘর পামো কিনা জানিনা।

এছাড়াও ঘর পাওয়া জহুরা খাতুন (৫০) ও শহিদুল ইসলাম (৪৮) বলেন, সরকারের দেয়া বিনামূল্যে হামরা ঘর পাইছি। কিন্তু সেই ঘরের কাজ এলাও বাকি আছে। এলাও লেট্টিন বসায় নাই। রিং-স্লাব রেখে চলি গেছে। এলা কামলা নিয়া হামাকেই বসা খাইবে এ গুলা। ঘরের মধ্যে বানানো খুঁটি না দিয়া কেনা খুঁটি দিয়ে ঘর বানাইছে। কাউকে কেনা খুঁটি আবার কাউকে বানানো খুঁটি দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। ঘরের মালামাল আনাসহ এক বস্তা সিমেন্ট, বালু, খোয়া, কাঠ-বাশ কিছু করে কিনে দেয়ায় প্রায় ৭/১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

যার জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পে অনিয়ম আর দুর্নীতি দেখে প্রকল্প পরিচালক, দুদকসহ প্রশাসনের নিকট গত বছরের অক্টোবর মাসে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক। তিনি বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা এবং উন্নয়নের বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু এই অভিযোগ করার কারণে প্রশাসন এবং প্রভাবশালীদের তোপের মুখে পড়েছেন। ফলে প্রায় সময় পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে।

শিলখুঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাঈল হোসেন ইউসুফ জানান, তিনি স্বীকার করেন তার ইউনিয়নে তালিকা ভুক্ত নামধারীগণ ঘর পায়নি। এই প্রকল্পে ক্রয় কমিটিতে চেয়ারম্যানগণ শুধু মাত্র সদস্য। ঘরের মালামাল ক্রয় করাসহ নির্মাণ কাজ পুরোটাই করেন ইউএনও স্যার নিজেই। আমরা চেয়ারম্যানগণ শুধু তালিকা দিয়েছি। সংশোধন করা না করা ইউএনও স্যার নিজেই জানেন। ক্রয় কমিটির রেজুলেশনে ১০জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ৬জন চেয়ারম্যানই স্বাক্ষর করে নাই বলে জানান তিনি।

ভূরুঙ্গামারীর ইউএনও এস.এইচ.এম. মাগ্ফুরুল হাসান আব্বাসী দাবী করেন, জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পে কোন অনিয়ম হয়নি। উপজেলায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৪২৯টি ঘরের জন্য এক লাখ করে মোট ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে ছিলেন। এবং কাজও সমাপ্ত করেছেন। এরমধ্যে ১০/১২টি ঘরের তালিকা সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে লিখিত কোন অভিযোগ তার জানা নেই। তবে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন তিনি।

Exit mobile version