Site icon Jamuna Television

শিশু পরিবারে ধর্ষণের ঘটনায় দুই ধরনের তদন্ত প্রতিবেদন, বিচার নিয়ে সংশয়

পটুয়াখালী প্র‌তি‌নি‌ধি

পটুয়াখালী শিশু পরিবারের ৭ বছরের এতিম শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগ ও পুলিশি তদন্তে দুই ধরনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হ‌য়ে‌ছে। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য। অপর দিকে এ সুযোগে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অপরাধীরা। ফলে এতিম এ শিশুটির প্রতি পাশবিক নির্যাতনের বিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। এমনি এক পরিস্থিতিতে আদালত মামলাটিকে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

জানা গে‌ছে, গত বছরের ১২ নভেম্বর পটুয়াখালী শিশু পরিবারের ৭ বছরের শিশুকে মধ্যযুগীয় ভাবে ধর্ষণ করা হয়। যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তিন দিন ধরে আটকে রাখা হয়। পরে ১৫ নভেম্বর স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হাফিজ, অতিরিক্ত এসপি জসিম উদ্দিন ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা গিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে।

জেলা প্রশাসক এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে সমাজ সেবা অধিদফতের উপ-তত্ত্বাবধায়ক শারমিন সুলতানা পটুয়াখালী সদর থানায় ১৫ নভেম্বর মামলা দা‌য়ের করেন। যার নং-৬৬২/১৮, তারিখঃ ১৫-১১-১৮।

এদিকে ভিকটিমের নানী শাহনাজ পারভীন বাদী হয়ে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে ২৯ নভেম্বর পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। যার নং-৬৫৬/১৮। এ মামলায় ধর্ষক মোঃ মোতালেবকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের ডিডি শীলা রানী দাস, উপ-তত্ত্বাবধায়ক শারমিন সুলতানা ও শিশু পরিবারের খালাম্মা পারুলকে আসামি করা হয়। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে সদর থানাকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

থানা ও আদালতে দায়ের হওয়া দুই মামলার তদন্ত করেন পুলিশের এএসআই সুশেন চন্দ্র দে। কিন্তু চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগ পত্রে দেখা যায় শুধু মাত্র ধর্ষক মোতালেবের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়। সমাজ সেবার তিন কর্মকর্তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে ১৫ নভেম্বর ঘটনায় গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হাফিজ জেলা প্রশাসক বরাবরে গত বছরের ০৩ ডিসেম্বের ৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে উঠে আসে শিশু পরিবারের এতিম শিশুটির উপর নির্যাতনের নানা চিত্র। উল্লেখ করা হয় শিশুটিকে ধর্ষণ পরবর্তী ৭২ ঘন্টায় ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার সমাজসেবার ডিডি শিলা রানী, উপ-তত্ত্বাবধায়ক শারমিন সুলতানা এবং শিশুপরিবারে খালাম্মা পদের পারুলের অপতৎপরতা ও তাদের অপরাধের কথাও।

জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে শিশু পরিবারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যত্র বদলীর সুপারিশ করে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আলোকে ২২ জানুয়ারি বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস ২২ ফর্দ সংযুক্ত একটি প্রতিবেদন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রেরণ করেন। যাতে জেলা প্রশাসকের সুপারিশ বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেয়াসহ বিস্তারিত বিষয় স্পষ্ট উল্লেখ করেন। কিন্তু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি।

বিচারিক প্রতিবেদন ও মামলার চার্জসিট ভিন্নতা দেখা দেয়ায় আদালত মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে। এ ব্যপারে পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশসুপার মোঃ আক্তার হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, মামলাটি তদান্তাধীন রয়েছে এবং তিনি নিয়মিত তদারকি করছেন।

এ ব্যাপারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে যোগোযোগ করে তিনি জানান, পটুয়াখালীর সমাজ কল্যাণের ডিডি শিলা রানীর বিরুদ্ধে মন্ত্রি বরাররেও অনেক অভিযোগ আছে। পটুয়াখালী শিশু পরিবারের ধর্ষণের ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেন তি‌নি।

Exit mobile version