Site icon Jamuna Television

লেংটা বাবার মুরিদ

সেদিন আমাদের মহল্লার রাস্তা ধরে হাটছিলাম। পেছন থেকে একজন বয়স্ক লোক ডেকে বলল, ভাই এখানে লেংটা বাবার দরবারটা কোথায়?

বললাম, এই রাস্তা ধরে সোজা চলে যান। রাস্তার মাথায় গিয়ে হাতের বায়ে একটা সরু গলি পড়বে। গলির ভেতর ঢুকে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। লোকটা সেদিকে পা বাড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। এমন সময় জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আপনি পীরের কাছে যাচেছন কেন?

– ভাইজান আমার কোন সন্তানাদি নেই। পীর সাহেব বলেছেন দরবারে সিন্নি আর দরবারের সামনের বটগাছে একটা সুতা বেধে দিয়ে আসলেই আমার ঘরে ছেলেপুলে জন্মাবে। কথা শেষ করে আমি কিছু বলার আগেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে দ্রুত পা বাড়ালো লোকটা।

প্রায় মাস ছয়েক পরের কথা। পীরের দরবার সংলগ্ন গলি ধরেই যাচ্ছিলাম। দেখলাম সেদিনের সেই লোকটা। টঙে বসে চা খাচ্ছে। লোকটাকে দেখে কৌতুহল হল।

কাছে যেতেই ফিক করে হেসে দিয়ে বলল, কী খবর ভাইজান, ভাল আছেন ?
বললাম – ভাল। আপনার খবর কি ? ছেলে পুলে কিছু হলো?
– না, ভাইজান।
কেন? গাছে সুতা বাঁধেন নি ?
– বেঁধেছিলাম ভাইজান।
তবে?
– পীর সাহেব বলেছেন সবুর করতে হবে। সবুরে মেওয়া ফলে। পাশাপাশি নতুন করে তদবির করতে বলেছেন। প্রতি সপ্তাহে দরবারে কিছু হাদিয়া আর গাছে এক গাছি সুতা বেঁধে দিয়ে যেতে হবে।
আমি বললাম, আপনি কি প্রতি সপ্তাহেই এখানে আসেন?
– হ্যাঁ।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে পা বাড়লাম। কি যেন মনে করে আবার ফিরে এসে বললাম আচ্ছা আপনার স্ত্রী কেমন আছেন?…মানে উনারও তো কোন সমস্যা থাকতে পারে। উনাকে কি কোন ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েছিলেন?

ভদ্রলোক গম্ভীর হয়ে জবাব দিলেন, আমার গিন্নি গত হয়েছেন আজ দু’বছর হল।

এবার আর দীর্ঘশ্বাস নয় বরং আমার শ্বাসপ্রশ্বাসই বন্ধ হয়ে গেল! আশ্চর্য হয়ে বললাম আপনার স্ত্রী নেই অথচ…?

আমার কথা শেষ হবার আগেই লোকটি বলল, মরার আগে গিন্নি আমার জন্য কোন সন্তানাদি রেখে যাননি। উনার মৃত্যূর কিছুদিন পর পাড়ার এক মুরুব্বী আমাকে এখানকার লেংটা পীরের সন্ধান দেন। উনার অনেক অলৌকিক ক্ষমতা আছে। উনি চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। তাই উনার কাছে আসি। বোঝেনইতো এ সংসারে আমি একা। বিষয় সম্পত্তি এমনকি আমার বংশের ধারাটা ধরে রাখারও কেউ নেই। পীর সাহেবের ওসিলায় কোন ছেলেপুলে হলে আমি শান্তিতে অন্তত মরতে পারবো।

আমি মনে মনে বললাম আপনার বরং মরাই উচিৎ।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এটি নিছক গল্প মাত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীর সম্পর্কের সাথে লেংটা বাবা-মুরিদের সম্পর্কের মিল খুঁজতে যাবেন না যেন।

(লিখেছেন- অর্ণব প্রধান।)

Exit mobile version