Site icon Jamuna Television

সচিবের অপেক্ষায় ফেরি ছাড়তে দেরি, স্কুলছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর।

একজন যুগ্ম সচিবের গাড়ির অপেক্ষায় প্রায় ৩ ঘণ্টা ফেরি বসে থাকায় ঘাটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আশপাশের লোকজনের অনুরোধের পরও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ফেরি ছাড়েনি বলে অভিযোগ স্বজনদের। এমনকি প্রতিকার মেলেনি জরুরি নাম্বার ট্রিপল নাইনে ফোন করেও।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘাটে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের দাবি তাদের কাছে রোগীর স্বজনরা রোগীর অবস্থা জানানোর সাথে সাথে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান খোঁজ নিয়েছেন বলে কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আব্দুস সালাম জানিয়েছেন।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় প্রথমে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বৃহস্পতিবার তাকে আইসিইউ সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল। রাত আটটার দিক মাদারীপুরের কাঠালবাড়ী ১নং ফেরি ঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। রাত ৯ টার দিক কুমিল্লা নামের ফেরিটি শিমুলিয়া থেকে কাঠালবাড়ি ঘাটে এসে গাড়ি আনলোড করছিল। এসময় ওই রোগীর লোকজন ঘাটে কর্মরতদের তাদের রোগীর অবস্থা বললেও গাড়ি আনলোড শেষে ওই কর্মকর্তার গাড়ি না আসা পর্যন্ত ফেরি ছাড়তে রাজি হয়নি ঘাট কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর রাত পৌনে এগারোটার দিক নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগানো সাদা রংয়ের নোহা মাইক্রোবাসটি আসার পর ফেরি ছাড়ে। ফেরিটি মাঝ নদীতে পৌঁছলে মস্তিস্কে প্রচুর রক্তক্ষরণে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় তিতাসের। পরে শিমুলিয়া ঘাট থেকে আবারও ফেরিতে কাঁঠালবাড়ি ঘাট পৌছে ওই পরিবারটি তিতাসের লাশ নিয়ে নড়াইলে ফিরে যায়।

তবে পুলিশ ও ঘাটে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের কাছে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে যখন রোগীর কথা জানানো হয় তখনি তাদের অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরিতে লোড করে ১০ মিনিটের মধ্যেই ঘাট থেকে কুমিল্লা ফেরিটি শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আর সরকারি কর্মকর্তার জন্য খুব বেশি দেরি করেনি ফেরিটি।

কুমিল্লা ফেরির মাস্টার ইনচার্জ মোঃ সামসুল আলম বলেন, ফেরিটি কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আসার পর ভিআইপি যাত্রীর জন্য আমাকে খুব বেশি হলে আধ ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়েছিল। রাত আনুমানিক ১০ টার দিক ফেরি ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানতে পারি।

কাঠালবাড়ি ঘাটে সেই সময় কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসির টিএস ফিরোজ আলম বলেন, ওই দিন আমি অন্য ঘাটে দায়িত্বে ছিলাম। আমাকে সাংবাদিক ও রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে একজন ফোন করে তিতাস নামক ওই রোগীর অবস্থার কথা জানালে আমি পাশের ঘাট থেকে দ্রুত এসে অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরিতে তুলে দেই। প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যে ফেরিটিও ঘাট থেকে ছেড়ে যায়।

কাঁঠালবাড়ি ঘাট ট্রাফিক ইন্সপেক্টর উত্তম শর্মা বলেন, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে ফোন করার সাথে সাথে ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের অ্যাম্বুলেন্স ফেরিতে তুলে দিয়েছিল। আমরা তাদের সকল ধরনের সহযোগিতা করেছি।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আঃ সালাম বলেন, জেলা প্রশাসক স্যার সেদিন তার কার্যালয়ে একটি সভায় যুগ্ম সচিব স্যারের কথা আমাকে জানিয়ে তার নাম্বার দেয়। যুগ্ম সচিবকে পারাপার করার জন্য ঘাটে কোন ফেরি রাখা ছিল না। তাকে বহনকারী গাড়িটি ঘাটের কাছাকাছি চলে আসার ফোন পেয়ে কুমিল্লা ফেরিটি অ্যাম্বুলেন্সসহ সকল গাড়ি লোড দিয়ে সচিবের গাড়ির জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেছিল বলে জানতে পেরেছি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফোন করে ঘাটের ব্যপারে আমাকে জানান। আমি ওই সময়ে ঘাটের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মিটিংয়ে ছিলাম সেখানে ঘাটের দায়িত্বরত কর্মকর্তাও ছিলেন। আমি তাকে বলেছি যুগ্ম সচিব মহোদয় ফেরিতে যাবেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালে আমার দায়িত্ব বিষয়টি ঘাট কর্তৃপক্ষকে জানানো। তবে ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্সে না তুলে সচিবের জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। সচিব মহোদয়ের জন্য ফেরি অপেক্ষা করার বিষয়টি সম্পূর্ণ ঘাট কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমি আ্যম্বুলেন্স বসিয়ে রেখে সচিব মহোদয়কে নিতে হবে এমন কোন কথা বলিনি।

Exit mobile version