Site icon Jamuna Television

নোবেলের কথায় ‘রবীন্দ্রনাথের চূড়ান্ত অপমান’ দেখছে কলকাতার মিডিয়া!

জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে বাংলাদেশি তরুণ গায়ক মইনুল আহসান নোবেলের একটি মন্তব্যকে ‘রবীন্দ্রনাথের চূড়ান্ত অপমান’ হিসেবে প্রচার করছে কলকাতার সংবাদমাধ্যম। গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার নোবেল প্রসঙ্গে একাধিক প্রতিবেদন এসেছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত শীর্ষস্থানীয় বাংলা সংবাদমাধ্যমগুলোতে।

এর মধ্যে টাইমস অব ইন্ডিয়ার বাংলা ভার্সনে (এই সময়) শিরোনাম করা হয়েছে, “রবীন্দ্রনাথকে চূড়ান্ত অপমান, নোবেলের ঔদ্ধত্যে চাবকাতে চান ইমন!”

কলকাতার এক গায়িকা নোবেলের মন্তব্যের জন্য তাকে ‘চাবুক মারতে’ চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। সেটার কথাই শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও “রবীন্দ্রনাথকে চূড়ান্ত অপমান” অংশটি টাইমস অব ইন্ডিয়ার নিজস্ব মন্তব্য।

একই প্রতিবেদনের ভেতরে চুম্বক অংশ হিসেবে একটি লাইন দেয়া লেখা হয়েছে, “সরাসরি রবীন্দ্রনাথকে তিনি নাকচ করে দিলেন।”।

যদিও নোবেলের বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথকে ‘নাকচ’ করা বা তাকে অপমানসূচক কোনো মন্তব্য ছিলো না।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে (যেটি কয়েক মাস আগের) নোবেল যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো হুবহু এখানে তুলে ধরা হল–

“প্রিন্স মাহমুদ স্যারের লেখা এই গানটা নিয়ে আমি একটা কথা বলবো। তা নিয়ে হয়তো অনেকে অনেক কিছু আমাকে বলতে পারে। হয়তো খারাপ মনে করতে পারে। বাট এটা আমার পারসোনাল অপিনয়ন একদমই। আমি মনে করি যে, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ আমাদের দেশটাকে যতোটা এক্সপ্লেইন করে তার থেকে কয়েক হাজার গুণে বেশি এক্সপ্লেইন করে প্রিন্স মাহমুদ স্যারের লেখা এই গানটা। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যেটা আছে সেটা হয়তো রূপক অর্থে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়। বাট এটা কিন্তু একদম স্ট্রেইট ফরোয়ারডলি আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের আবেগের স্থানটা প্রপারলি তুলে ধরে।

তখন উপস্থাপক বলেন, “সেটার কারণ হয়তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাটা তো আসলে অনেক আগের লেখা। এনথেম হিসেবে লেখনওনি।” এবং এই কথার সাথে একমত পোষণ করে নোবেল আরও যোগ করেন, “আর আপনারা জানবেন যে, ঢাকা ভার্সিটির অনেকে কিন্তু মিছিলও করেছিলো যে এই গানটাকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে করা হোক আরকি।”

কথাগুলো বলার আগেই নোবেল একটা সতর্কীকরণ দিয়েছেন এই বলে যে, “এটা আমার পারসোনাল অপিনয়ন একদমই”। এরপর তিনি যা বলেছেন তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের চেয়ে প্রিন্স মাহমুদের লেখা গানটির প্রতি তার বেশি ভাললাগা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথে গানটিও বাংলাদেশকে ব্যাখ্যা করে, কিন্তু সেটা রূপকভাবে, সোজাসুজি নয়। তারচেয়ে বেশি সোজাসুজিভাবে বাংলাদেশকে পাওয়া যায় প্রিন্স মাহমুদের গানে। এই বক্তব্যটিতে রবীন্দ্রনাথের লেখা গানের প্রতিও শ্রদ্ধা প্রকাশ পাচ্ছে। তবে বেশি ভালোলাগা প্রকাশ পাচ্ছে প্রিন্স মাহমুদের গানের প্রতি। এর বাইরে রবীন্দ্রনাথকে “অপমান করার” মতো বা তাকে “নাকচ” করার মতো কোনো বক্তব্য নোবেল দেননি, বা জাতীয় সঙ্গীত বদলে ফেলারও কোনো দাবি করেননি।

কিন্তু এই বক্তব্যকেই “রবীন্দ্রনাথের জন্য অপমান” হিসেবে তুলে ধরছে কলকাতার সংবাদমাধম্যগুলো। টাইমস অব ইন্ডিয়ার বাইরে সিএনএন-নিউজ এইটিনের বাংলা ভার্সনেও একই ধরনের শিরোনাম করা হয়েছে “বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে অপমান, নতুন বিতর্কে নোবেল”।

ওয়ান ইন্ডিয়া নামক আরেকটি পোর্টালে শিরোনাম করা হয়েছে, “নোবেলকে ‘চাবকে’ ঠিক করার বার্তা ইমনের! রবীন্দ্রনাথকে বাংলাদেশী গায়কের চরম অপমান নিয়ে তোলপাড়”।

আরেকটি পোর্টালের শিরোনাম, “নোবল করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকে অপমান, ইমন চক্রবর্তী ক্ষুব্ধ!” অন্য একটিতে লেখা হয়েছে, “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নাকচ করে দিলেন নোবেল! উঠতি গায়কের ঔদ্ধত্যে তাঁকে চাবকাবেন প্রসিদ্ধ গায়িকা ইমন”

Exit mobile version