Site icon Jamuna Television

কাশ্মিরকে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেয়া ‌’৩৭০ ধারা’ আসলে কী?

কাশ্মিরে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিল কেন্দ্র সরকার। ফলে কার্যত নতুন করে কাশ্মিরের ইতিহাস রচনার পথে মোদি সরকার। একইসঙ্গে কাশ্মীর থেকে ভেঙে আলাদা করে দেওয়া হল লাদাখকে। দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। দু’টি জায়গাতেই দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করা হবে। অর্থাৎ, বিশেষ মর্যাদার পাশাপাশি সাধারণ রাজ্যের মর্যাদাও হারালো কাশ্মির।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীর একটি ব্যতিক্রমী রাজ্য – কারণ প্রতিরক্ষা-পররাষ্ট্র বা যোগাযোগের মতো কয়েকটি বিষয় ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সেখানে ভারতের কোনও আইন প্রয়োগ করতে গেলে রাজ্য সরকারের সম্মতিও জরুরি হতো।

নাগরিকত্ব, সম্পত্তির মালিকানা বা মৌলিক অধিকারের প্রশ্নেও এই রাজ্যের বাসিন্দারা বাকি দেশের তুলনায় বাড়তি কিছু সুবিধা ভোগ করতেন, আর ৩৭০ ধারাই তাদের সে অধিকার দিয়েছিলো।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জম্মু-কাশ্মির ভারতের অঙ্গ ছিল না। ছিল মহারাজা হরি সিং-এর শাসিত রাজতন্ত্র। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর বিদ্রোহীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে রাজা হরি সিং ভারতের কাছে সেনা সাহায্য চান ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন’, অর্থাৎ ভারতভুক্তির শর্তে। তাতে জম্মু-কাশ্মিরকে ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেবার সংস্থান রাখা হয়। সে সময়ে বিনা পারমিটে কাশ্মীরে কেউ প্রবেশ করতে পারতো না।

৩৭০ নং ধারা কি রদ করা যায়?

ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীর সংক্রান্ত ৩৭০ নং ধারা রদ করার প্রক্রিয়া সহজ নয়। সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা আছে সংসদের। রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা সংশোধন করতে পারেন। অবশ্য তা রাজ্যের গণপরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে। এছাড়া এটা কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তি, তাই তা সংশোধন করা অসম্ভব।

ঐ ধারা রদ করতে হলে প্রথমে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা – উভয় সভাতেই রদ করা সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস করাতে হবে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়।

তারপর সেই প্রস্তাবটিকে অনুমোদন পেতে হবে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে।

৩৭০ নং ধারা রদ করা হলে জম্মু-কাশ্মির আর ভারতের অঙ্গ হয়ে থাকে না। কারণ, ভারত্যের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মিরের সাংবিধানিক সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আছে ঐ ৩৭০ নং ধারার ওপর। ৩৭০ ধারা না থাকলে ভারতের সাথে কাশ্মিরের কোনো সম্পর্ক থাকে না। অর্থাৎ, এই ধারাটি বাতিল হওয়ার অর্থ হচ্ছে কাশ্মির আর সাংবিধানিকভাবে ভারতের অংশ না থাকা।

Exit mobile version