Site icon Jamuna Television

হলফনামায় তথ্যগোপন বগুড়া-৭ আসনের এমপি বাবলুর, ব্যবস্থা নিলে হারাবেন পদ

মেহেরুল সুজন, বগুড়া ব্যুরো
হলফনামায় বেমালুম নিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তথ্য গোপন করে গেছেন বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম গোলবাগী বাবলু। ২০০৭ সালে নিজের প্রতিষ্ঠা করা কারিগরি বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন এক শিক্ষক। বিচার প্রক্রিয়ায় থাকা মামলাটির কোনো তথ্য নির্বাচনের আগে বিধি-মাফিক হলফনামায় উল্লেখ করেন নি গোলবাগী।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন তথ্য গোপনের মধ্য দিয়ে এই সংসদ সদস্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা লঙ্ঘণ করেছেন। আইনী প্রক্রিয়ায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিলে তিনি ওই পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় কমিশনে জমা দেয়া হলফনামার ৩ এর ক’ তে রেজাউল করিম গোলবাগী উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কোনো মামলা ছিলো না। কিন্তু যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ২০০৭ সালে শাজাহানপুর থানায় দায়েরকৃত, ‘নিয়োগের নামে উৎকোচ’ গ্রহণ মামলার চার্জশিটভুক্ত একমাত্র আসামি ছিলেন তিনি। অথচ মামলা থাকলে তার ফলাফল উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, হলফনামার ৩ এর খ ধারায়।

গোলবাগীর বিরুদ্ধে করা ওই মামলার বাদী আবু হায়াত খান জানান, ২০০৬ সালে শাজাহানপুর উপজেলা সদরে নিজের গড়া ‘মাঝিড়া কারিগরি বিদ্যালয়ে’ শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে, আট জনের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়েছিলেন গোলবাগী। নিয়োগ দিতে না পারলে টাকা ফেরত দেবেন-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলেও জানান আবু হায়াত। তবে সেই টাকা ফেরত পাননি তারা।

মামলাটির নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাবার নাম ঠিক থাকলেও, দায়েরকৃত মামলায় ‘রেজাউল করিম গোলবাগী বাবলু’র জায়গায় উল্লেখ রয়েছে ‘শওকত আলী গোলবাগী বাবলু’।

মামলার বাদী আবু হায়াত জানান, নিজের স্বার্থে একেক জায়গায়, একেক নাম ব্যবহার করেন বাবলু। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে ‘শওকত আলী গোলবাগী বাবলু’ নাম ব্যবহার করেছেন তিনি। এখন সংসদ সদস্য হবার পর তারা তার নাম দেখছেন ‘রেজাউল করিম বাবলু’।

শাজাহানপুর উপজেলা সদরের বগুড়া-ঢাকা মহাসড়ক লাগোয়া যে ভবনটি ভাড়া নিয়ে বাবলু কারিগরি বিদ্যালয় শুরু করেছিলেন, সেই ভবনের ভাড়াটিয়া এখন ‘দারুল ফাতাহ মাদরাসা’।

ওই মাদরাসার পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম রাজু যমুনা নিউজকে জানান, তারা ভবনটিতে মাদরাসা চালুর আগে এটি ভাড়া নিয়েই কারিগরি বিদ্যালয়টি চালু করেছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য গোলবাগী বাবলু। তবে এখন সেই প্রতিষ্ঠানটি কোথায় আছে- তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি এই শিক্ষক।

রেজাউল করিম-ই যে শওকত আলী, তার প্রমাণ মেলে ২০০৩ সালে তার মালিকানায় আসা পৌনে পাঁচ শতক জমির রেজিস্ট্রি দলিল থেকে। ডোমনপুকুর মৌজায় ওই জমির সাবেক দাগ নম্বর ১২১৬, আর হাল দাগ নম্বর ১৩৭৭। জমির মূল মালিক একই এলাকার শাহনাজ বেগম ওরফে নমিতা, আছমা বেগম, আছিয়া বেগম ও রাজিয়া সুলতানার কাছ থেকে স্ত্রীসহ নিজের নামে জমিটি কেনেন বাবলু। জেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সংরক্ষিত ওই দলিলে দেখা যায়, জমির ক্রেতা ‘রেজাউল করিম গোলবাগী ওরফে শওকত আলী গোলবাগী (বাবলু)’ এবং তার স্ত্রী বিউটি বেগম।

ছবি : জমির রেজিস্ট্রি দলিলে দুই নামের প্রমাণ

এছাড়া শাজাহানপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবেও, উল্লেখ রয়েছে শওকত আলী গোলবাগী নামটি। নির্বাচনের পর এই প্রেসক্লাবের তরফ থেকে তাকে সম্বর্ধনার আয়োজনও করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম গোলবাগী বাবলু যমুনা নিউজকে জানান, মামলার তথ্য তার জানা নেই। হলফনামায় তা উল্লেখ করেছেন কী না তাও ‘মনে নেই’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। দাবি করেন, তার নাম ‘রেজাউল করিম বাবলু’-ই। জমির দলিলে থাকা নামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,’আপনারা গবেষণা করেন, গবেষণা করে যে নামটা ভালো মনে হয়, সেটি লেখেন।‘

এদিকে, সু-শাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলছেন, যদি প্রমাণিত হয় তিনি তথ্য গোপন করেছেন, তাহলে এই অপরাধে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য ব্যক্তি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৪ ধারা মোতাবেক তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হবে। বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আছে। তথ্য গোপনের বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে প্রমাণ করা গেলে তার প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে তিনি নির্বাচিত নাকি পরাজিত তা বিবেচ্য নয়।

৩০ ডিসেম্বর ভোটের দু’দিন আগে বগুড়া- ৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে আচমকা বিএনপির সমর্থন পান এই স্বতন্ত্র প্রার্থী। উপজেলা নির্বাচনে ১৭ ভোট পাওয়া বাবলু তাই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের এলাকা হিসেবে পরিচিত আসনটিতে ১ লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য।

Exit mobile version