Site icon Jamuna Television

ঈদ সামনে রেখে লঞ্চ টার্মিনালে সক্রিয় প্রতারক চক্র

আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে নাড়ির টানে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হয়ে নৌপথে পাড়ি জমান হাজারও মানুষ। উৎসবমুখর যাত্রাকে সামনে রেখে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠে একটি প্রতারক চক্র। অভিযোগ আছে কিছুসংখ্যক পুলিশ, ঘাটের কুলি, আনসার সদস্য ও অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের মদদে এ চক্রের সদস্যরা পুরো ঘাট এলাকায় রাজত্ব কায়েম করেছে। মালামাল পরিবহন বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায়, লঞ্চে যাত্রী ওঠার আগে বিছানা-চাদর বিছিয়ে ডেক দখল করে টাকার বিনিময়ে ছাড়া, সিন্ডিকেট করে কেবিন দখল করে রাখা, তার মাঝে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে ছিনতাই চক্র- এসব অব্যবস্থাপনায় অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে এ ঘাটে আগত যাত্রীরা। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, আগের তুলনায় বন্দরের সমস্যা অনেকটা কমেছে যেগুলো রয়েছে তা মাথায় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর লঞ্চঘাটে যাত্রীদের কুলি ও ঘাট ইজারাদার কর্তৃক নানা হয়রানির শিকার হতে হয়, লঞ্চের ডেক এরিয়া থেকে চুরি হয় যাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল, তাছাড়া পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সামনেই প্রতারক চক্রটি সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে মালপত্র ছিনিয়ে নেয় তবে দুই ঈদে বেপরোয়া হয়ে ওঠে এরা।

যাত্রীদের আরও অভিযোগ- কোনো ধরনের নিয়ম না মেনেই সদরঘাটের প্রবেশপথে ইজারাদারের লোকরা ইচ্ছামতো টোল আদায় করেন। হাতে কোনো মালামালের ব্যাগ দেখলেই টেনে নিয়ে লঞ্চে পৌঁছে দেয়ার পর দাবি করে অতিরিক্ত টাকা, কম দিতে চাইলে কুলিদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয় যাত্রীদের।

অন্যদিকে যে কোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সব লঞ্চে নেই পর্যাপ্ত সেফটি ব্যবস্থা। ঈদকে কেন্দ্র করে নেয়া হয় ধারণক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী। বেড়েছে টিকিটের দামও। এমভি মানিক-১, শায়রুখ-১, কর্ণফুলী-১২, পারাবত-১৫, অ্যাভেঞ্জার-৫ ও কীর্তনখোলা-১০-এ কথা বলে জানা যায়, লঞ্চের ডেকের রেগুলার ভাড়া থাকে ২০০ টাকা যা ঈদে বেড়ে ২৫০ টাকা হয়, প্রতি কেবিনের ভাড়া বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

সদরঘাট দিয়ে ভোলাগামী যাত্রী বেলায়েত মিয়া বলেন, অনেক সময় দেখা যায় আমরা নিজের ব্যাগ নিজে নিতে পারি কিন্তু কুলিরা এসে টান দিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে। এখানের যেমন চিত্র যেখানে গিয়ে নামব সেখানেও একই চিত্র। হেল্প লাইনের যে অভিযোগ নম্বর দেয়া আছে সেখানে অভিযোগ করেও কোনো হেল্প পাওয়া যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঘাটশ্রমিক বলেন, ‘ভাই এহানে মলামাল টাইনা যে টেহা (টাকা) পাই তার ভাগ দিতে হয় নেতাদের, না হয় এখানে কাজ করা যাই না।’

বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদী-বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, অন্যবারের সমস্যাগুলো মাথায় নিয়ে এবারের ঈদযাত্রাতে যেন জনগণের কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এরই মধ্যে। ঘাট শ্রমিক, পুলিশ, লঞ্চ মালিকসহ সব সংগঠনদের সঙ্গে বৈঠক করেছি লঞ্চযাত্রীদের নিরাপত্তা ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে।

ঘাটে কুলি হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, কুলি হয়রানি এটি অন্যতম সমস্যা, এবার এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, ন্যূনতম বেয়াদবি করলে ব্যবস্থা, বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। আমাদের বিশেষ টিম থাকবে অ্যাপ্রোন পরা যাতে যাত্রীরা অভিযোগ করার জন্য সহজে আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করতে পারে। আমাদের হটলাইন হেল্প দেয়া আছে যাতে যে কোনো সমস্যা দ্রুত যোগাযোগের জন্য অকিটকির নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছি। ডেকে যেসব স্টাফ জায়গা দখল করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আমাদের বিশেষ টিম থাকবে এগুলো মনিটরিং করার জন্য।

বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল বলেন, এবারের ঈদ ভরাবর্ষায় তাই নৌপথে কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই যাত্রীদের নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী বহন বন্ধে কঠোর হতে হবে। আমরা প্রতি বছরই দেখি সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলেন, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেয়া হবে না। কিন্তু ঠিকই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই নৌযানগুলো ছাড়ে। তাই দুর্ঘটনা ঘটার আগেই অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল বন্ধে প্রশাসনের আন্তরিকতা কামনা করছি।

Exit mobile version